এক বছর আগে অংশীজনদের সংলাপে দেওয়া প্রস্তাবগুলো কতটুকু জায়গা পেল, তাও এবার মতবিনিময় সভায় উঠে আসবে।
Published : 16 Jul 2023, 09:28 AM
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ ও সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধিদের নিয়ে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
আগামী ২০ জুলাই অনুষ্ঠেয় এ মতবিনিময় সভায় আসতে অংশীজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব পাস হয়েছে। ৯১ অনুচ্ছেদের একটি ধারা নিয়ে অনেকে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা করছে, অনেকে ভিন্নতর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এটা নিয়ে যে অস্পষ্টতা, তা দূর করতে অংশীজনদের কাছে ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে এ মতবিনিময় সভায়।”
তিনি এও বলেন, আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে যাদের ভুল ধারণা রয়েছে, তা কমিশনের ব্যাখ্যায় নিরসন হবে।
বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২২ সালে আরপিও সংস্কার নিয়ে সংলাপ করে অংশীজনদের মতামত নেয়। পরে অগাস্টে সংস্কার প্রস্তাব পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়ে। কয়েক দফা চিঠি চালাচালির পর খসড়া চূড়ান্ত হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন শেষে সংসদে বিলটি পাস হয় এ মাসের শুরুতে।
এক বছর আগে অংশীজনদের সংলাপে দেওয়া প্রস্তাবগুলো কতটুকু জায়গা পেল তাও এবার মতবিনিময় সভায় উঠে আসবে।
২০ জুলাইয়ের মতবিনিময় সভার আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছে, “আরপিও নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অন্যান্য অংশীজনের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এতে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে আরপিও নিয়ে অনেকের মধ্যে অস্পষ্টতা রয়েছে। যা দূরীভূত হওয়ার প্রয়োজন।“
আলোচিত বিলটি পাসের জন্য ৪ জুলাই সংসদে তোলা হলে তা বিরোধীদের আপত্তির মুখে পড়েছিল।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(এ) ধারায় বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতিপ্রদর্শন, চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যে কোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমত সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোটগ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।
এর সঙ্গে একটি উপধারা যোগ হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, শুধু কয়েকটি কেন্দ্রের গোলযোগ-জবরদস্তির জন্য পুরো আসনের ভোট বন্ধ করা যাবে না। সেই সব কেন্দ্রের ভোটই বন্ধ করা যাবে, যেসব কেন্দ্রের ভোট গ্রহণে অভিযোগ নেই, তা স্থগিত করা যাবে না।
আইনে ‘ইলেকশনের’ জায়গায় ‘পোলিং’ শব্দটা এনে বড় পার্থক্য করা হয়েছে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেছিলেন, “নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে যে কোনো নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু এই অধিকার খর্ব করা হল।”
সংশোধনের পর এখন কী করা হল তা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “সেন্টারগুলো বন্ধ করতে পারবে কিন্তু পুরো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না।”
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান দাবি করেছিলেন, দেশে আইন হয় ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সরকারের স্বার্থে; নির্বাচনের আগে এমন আইন করা হয়।
সংসদের বাইরেও আরপিও সংশোধনী নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুর্শিদ মনে করেন, ৯১ অনুচ্ছেদের যে সংশোধন তাতে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইসির নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
তবে আইনমন্ত্রী এসব অভিযোগ নাকচ করে দাবি করেছেন, বিদ্যমান আইনের ৯১ এ অনুচ্ছেদে ভোট বন্ধের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। ইসির ক্ষমতা কমানো হয়নি বরং এ নিয়ে বিরোধীরা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
এসব সমালোচনার মধ্যে সবশেষ ১০ জুলাই সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ব্রিফিংয়ে এসে দাবি করেন, আরপিও সংশোধনের ফলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ‘আরও বেড়েছে ও সুসংহত হয়েছে’। ভোট বন্ধে ইসির কোনো ক্ষমতা ‘রহিত হয়নি’, বরং আরপিও সংশোধন নিয়ে জনগণকে ‘বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, ইসিকে হেয় করা হচ্ছে’।
৯১ অনুচ্ছেদের এ ধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের পরিবর্তে ‘পোলিং’ শব্দটি ব্যবহারে ভোটে ইসির ক্ষমতা কমেছে বলে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলে আসছেন। তবে সিইসি দাবি করছেন, এটা ‘অপব্যাখ্যা’ করা হচ্ছে, যা ‘দুঃখজনক’।
সিইসির ভাষ্যে, “৯১ এ ধারায় কোনো পরিবর্তন যদি হত- তাহলে আমাদের ক্ষমতা হেরফের হত। সেখানে কিছু করা হয়নি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারা- যেখানে পোলিং পিরিয়ডে আমরা যে কোনো একটি/দুটি কেন্দ্র বা সমস্ত কন্সটিটিউয়েন্সির (ভোট) আমরা বাতিল করে দিতে পারব। সে ক্ষমতা হুবহু আগের মতো রয়েছে।”
সংশোধনে নতুন দফা ৯১ এএ সংযোজনের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তার ফল সরকারিভাবে পাঠানোর পরে ইসির গেজেট করা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না। এখন অভিযোগ থাকলে গেজেট ‘উইথহেল্ড’ করতে পারব, সেক্ষেত্রে কন্সটিটিউয়েন্সির নির্বাচনটা বাতিল না করে যে যে কেন্দ্রে ফলাফল বাধাগ্রস্ত হয়েছে মনে করবে সেসব কেন্দ্রে ফলাফল বাতিল করতে পারবে।
পুরো জাতি একটা সুন্দর নির্বাচন চায় মন্তব্য করে সিইসি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে অহেতুক, বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে ইসিকে হেয় করা বাঞ্ছনীয় নয়। কমিশনকে গঠনমূলক সাজেশন্স দিয়ে সহায়তা করলে আমরা উপকৃত হব।”
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে ‘সন্তুষ্ট’ ইইউ: আইন সচিব
ইসির ‘প্রস্তুতি ও সক্ষমতা’ জানল ইইউ প্রতিনিধি দল
বিরোধীদের আপত্তির মুখে আরপিও সংশোধনী বিল পাস
ইসির ক্ষমতা রহিত হয়নি, বেড়েছে: সিইসি
ভোটে গুরুতর অনিয়ম হলে গেজেটের আগেই ফল আটকে দিতে চায় ইসি
নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব হয়নি, বরং বেড়েছে: রাশেদা সুলতানা