নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) নতুন সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান ক্ষমতা খর্ব হয়নি, বরং বেড়েছে।
তার যুক্তি, সংশোধনী অনুমোদনের মাধ্যমে ভোটের ফলের গেজেট প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অভিযোগে আমলে নেওয়ার পথ খুলছে, যা আগে আইনে ‘অস্পষ্ট’ ছিল।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য রাশেদা সুলতানা।
তিনি বলেন, “এখন আমরা চাচ্ছি এক বা একাধিক কেন্দ্র - যেখানেই হোক, রিটার্নিং কর্মকর্তার ফল ঘোষণার পর থেকে গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত, এই মধ্যবর্তী সময়ে অভিযোগ এলে সেটা যেন তদন্ত করে বন্ধ করতে পারি।
“যেখানে ক্ষমতাই ছিল না, সেখানে তো কিছুটা হলেও বাড়ল। পুরোটা না হলেও কিছুটা তো অর্জন হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ছিল না।
“বলা হয়েছে, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের হাঙ্গামা সৃষ্টি হলে বা ভোটের পরিবেশ নষ্ট হলে নির্বাচনী এলাকার এক বা একাধিক কেন্দ্রের ভোট স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে নির্বাচন কমিশন।”
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি গেজেটে প্রকাশের পরও ভোট বাতিল করার ক্ষমতা চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সেই ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়নি।
রোববার এ বিষয়ে কমিশনের অবস্থান ব্যাখ্যা করে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, “গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নির্বাচন বন্ধ করার জন্য ৯১-এর (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী (নির্বাচন পূর্ব পর্যন্ত, নির্বাচন চলাকালীন) কমিশনের একটা ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। সেই ক্ষমতায় কমিশন কোনো অনিয়ম, কারচুপি যেটাই হোক, নির্বাচন কমিশনের নজরে এলে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। এটা তো আছেই আইনে।”
নির্বাচনের ফলাফলের তিনটি পর্যায় তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা কেন্দ্রে একটা রেজাল্ট দেন, এই রেজাল্ট চারটা কপি করা হয়। একটা প্রার্থীদের জন্য, একটা সাঁটানোর জন্য, একটা রিটার্নিং কর্মকর্তার জন্য, এবং আরেকটা কপি করতে হয়। এগুলো করার পর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠান। এরপর তিনিও ফলাফল ঘোষণা করেন।
“ওই রেজাল্ট কিন্তু প্রাইমারি রেজাল্ট (প্রাথমিক ফল), চূড়ান্ত না। কমিশন থেকে গেজেট হলে তা চূড়ান্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণার পর কমিশনে ফলাফল পাঠানোর সময় কিন্তু অনেক সময় অভিযোগ আসে। কিন্তু এই সময়টার মধ্যে কোনো অভিযোগ এলে কমিশনের হাতে ক্ষমতা থাকে না; সেই অভিযোগের বিষয়ে কমিশন কিছু করতে পারে না। তাকে গেজেটটা করে দিতে হয়।
“ভোট শেষে ফলাফল গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে তদন্ত সাপেক্ষে গেজেট আটকে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা নিতেই নতুন করে প্রস্তাব পায় ইসি।”
রাশেদা বলেন, “যদি বড় ধরনের কোনো অভিযোগ থাকে, যে সত্যিকার অর্থেই বড় কোনো অনিয়ম ঘটে গেছে, সেটা রেখেই যদি একটা গেজেট করে দেওয়া হয়, তখন অভিযোগকারীদের কমিশনের প্রতি একটা অনাস্থা থেকেই যায়। কাজেই তার অভিযোগ আমলে নেওয়া উচিত।
“এই জায়গাটাতেই আমরা চিন্তা করলাম যে শূন্য আছে। কমিশনের হাতে কোনো সুযোগ নেই। আমরা সেখানেই একটা নতুন প্রস্তাব পাঠালাম সংশোধনীতে, যেটা মন্ত্রিপরিষদে গেছে।”
কী ক্ষমতা চেয়েছেন এর ব্যাখ্যায় রাশেদা সুলতানা জানান, “আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদের (ক) উপ-অনুচ্ছেদে প্রস্তাব করা হয়েছে - কোনো অনিয়মের তথ্য বা অভিযোগ আসলে কমিশন সেই গেজেট নোটিফিকেশনটা স্থগিত রাখবে। এরপর তদন্ত করে যদি অভিযোগটার সত্যতা প্রমাণ হয় তখন ব্যবস্থা নিতে পারবে।
“তখন কমিশন সুনির্দিষ্টভাবে যে জায়গাটায় অনিয়ম হয়েছে সে জায়গাটার কেন্দ্র বলেন বা যে আসনটার ভোট বাতিল করার জন্য চাচ্ছিলাম। মন্ত্রিপরিষদ ওইখানে পুরো আসনের (এন্টায়ার শব্দটা) কথাটা বাদ দিয়ে সেটা খণ্ড করে আংশিকভাবে একটা অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা পুরো কপিটা এখনও দেখিনি।”
ইসির বিদ্যমান ক্ষমতা খর্ব হয়নি বলেও দাবি করেন রাশেদা সুলতানা।
তিনি বলেন, “বিভ্রান্তি যেটা হয়েছে, অনেকে মনে করছেন যে ৯১(ক)-তে যে ক্ষমতাটা ছিল, নির্বাচন চলাকালীন (ভোটের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত) নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার যে সুযোগটা সেটা বোধহয় খর্ব হয়েছে। বিষয়টা তা না। কেননা, আমরা তো ওটা চাইনি।
“রিটার্নিং অফিসার ফল প্রকাশের পর থেকে গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টায় অনিয়ম হলে যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই ক্ষমতাটা চাওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ভোটগ্রহণ শেষ থেকে গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগ আমলে এনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আসবে এ আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে। পুরোটা না হলেও কিছুটা তো অর্জন হয়েছে। পুরোটা বাতিলের ক্ষমতা পেলে ভালো, কেননা, যারা অনিয়ম করে তাদের একটা ভয় থাকতো।”
পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে জবাবে রাশেদা সুলতানা জানান, “কোনো ধরনের নমনীয়তার কোনো সুযোগই নেই। অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশন চায় সবগুলো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হোক। কমিশনের ইচ্ছার কোনো কমতি নেই।
“আরপিও মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা সংসদে উপস্থাপন করা হবে। এরপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রস্তাবগুলো সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে। সবশেষে বিল আকারে পাসের জন্য তা সংসদে উপস্থাপন করা হবে। সংসদের অনুমোদন পাওয়ার পর আইন হিসেবে কার্যকর হবে এই প্রস্তাব।”