“আমরা বলেছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের যে আইনগত কাঠামো আছে, সেটা যথেষ্ট,” বলেন আইন সচিব।
Published : 12 Jul 2023, 07:22 PM
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামো ‘যথেষ্ট’ বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।
বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়ন করতে আসা ছয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দল বিদ্যামান আইনি কাঠামোতে ‘সন্তোষ প্রকাশ করেছে’ বলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার জানিয়েছেন।
বুধবার সচিবালয়ে ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইন সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের আইনগত কাঠামো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট কিনা, তারা এটা জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের যে আইনগত কাঠামো আছে, সেটা যথেষ্ট।
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) পাস হয়েছে, সেখানকার ৯১(১)এ-তে নির্বাচন বাতিল করার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ৯১-এএ যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করেছেন। এটা ওটার আরও বাড়তি। ওনারা এতে সন্তুষ্ট হয়েছেন।”
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে ইইউ প্রতিনিধি দল কিছু বলেছে কিনা, এ প্রশ্নে গোলাম সারওয়ার বলেন, এসব নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি।
“তারা জানতে চেয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ আইনি কাঠামো যথেষ্ট কিনা। আমরা বলেছি, হ্যাঁ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের মেকানিজম আছে, আইনি কাঠামো আছে। এ আইনি কাঠামো যথেষ্ট অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, আর অন্য কোনো কিছু করার প্রয়োজন নেই।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাদের নিয়োগে সম্প্রতি যে আইন করা হয়েছে, ‘উপমহাদেশে এ রকম আর কোনো আইন নেই’ বলেও মন্তব্য করেন আইন সচিব।
নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির আইনেরও কথাও ইইউ প্রতিনিধি দলকে বলা হয়েছে জানিয়ে আইন সচিব বলেন, “তারা এটার বিষয়ে প্লিজড হয়েছেন। আইনটাও আমরা তাদের দিয়েছি।
“আরেকটি বিষয় তাদের জানিয়েছি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একজন যুগ্ম জেলা জজ এবং একজন সিনিয়র সহকারী জজের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তফসিলের শুরুর দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট নোটিফিকেশন হওয়া পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিয়ম বা কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তারা সেটার প্রতিবেদন তৈরি করে নির্বাচন কমিশনকে দেন। নির্বাচন কমিশন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।”
বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিদের জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনের চাহিদামত সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করা হয়। তখন তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করেন।
“জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনের আগে দু-দিন, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পর দু-দিনসহ মোট পাঁচদিন দায়িত্ব পালন করেন। তখন কোনো অনিয়ম হলে তারা সংক্ষিপ্ত বিচার (সামারি ট্রায়াল) ও আরপিওতে যে বিধানগুলো আছে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এটার বিষয়ে তারা প্রশংসা করেছে,” বলেন আইন সচিব।
এ বছরের শেষে বা পরবর্তী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ সফর করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যের এই ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন বা অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল।
৮ থেকে ২৩ জুলাই এ সফরে মূল নিবার্চন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিক্স ও নিরাপত্তা– ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়ন করবে এই মিশন। এর অংশ হিসেবে তারা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন।
স্বাধীন এই প্রতিনিধি দল ইউরোপীয় জোটের পররাষ্ট্র বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেফ বোরেলের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন তিনি।