গত ৯ জুন রাতে প্রসবের সময় নবজাতক এবং ১২ জুন রাতে প্রসূতি মাহবুবু রহমান আঁখি মারা যান।
Published : 12 Jul 2023, 08:39 PM
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় চিকিৎসক শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানার জামিন আবেদন জজ আদালতেও নাকচ হয়েছে।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান বুধবার শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন।
বিভিন্ন হাসপাতালের প্রায় একশ চিকিৎসক এদিন শুনানির সময় এজলাসে ও বারান্দায় হাজির হন।
জামিন চেয়ে আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, “প্রসূতি ও নবজাতককে বাঁচাতে চিকিৎসক সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন।”
অনেক দূরের বাসা থেকে সেই প্রসূতিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল জানিয়ে আইনজীবী বলেন, “রাস্তাতেই প্রসূতির অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে। চিকিৎসার অবহেলা ছিল না।”
চিকিৎসক শাহজাদী এক মাসের কাছাকাছি সময় ধরে কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন জানিয়ে করে এ আইনজীবী বলেন, “তাকে জামিন দেওয়া হোক।”
এরপর বক্তব্য রাখেন প্রসিকউশন পুলিশের সহকারী কমিশনার মুত্তাকিম ও আইনজীবী তাপস পাল। তারা জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন।
যা ঘটেছে
অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তান জন্ম দিতে নিজের ইচ্ছের কথা স্বামীকে জানিয়েছিলেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মাহবুবা রহমান আঁখি। সেজন্য গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সংযুক্তা সাহার চিকিৎসা নেন তিনি।
প্রসবব্যথা উঠলে গত ৯ জুন মধ্যরাতে কুমিল্লা থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে আঁখিকে নিয়ে আসেন তার পরিবার। আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলীর ভাষ্য, প্রসূতিকে ভর্তির সময় চিকিৎসক সংযুক্তা হাসপাতালেই আছেন বলা হলেও আসলে তিনি ছিলেন না।
সেই রাতে ওই চিকিৎসকের সহকারীরা প্রথমে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা করেন। সে সময় জটিলতা তৈরি হলে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুটি ওইদিনই মারা যায়।
সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আঁখিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জুন মারা যান আঁখি।
এই ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও চিকিৎসক সংযুক্তা সাহা একে অপরকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। সংযুক্তার দাবি, তিনি হাসপাতালে ছিলেন না, তাকে না জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ভর্তি করেছে।
অন্যদিকে আঁখির চিকিৎসায় ‘অবহেলা’ হয়েছিল, এটি স্বীকার করে এর দায় সংযুক্তরা ও তার দলের ওপর চাপিয়েছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল। তাদের দাবি, সংযুক্তার নির্দেশে এর আগেও তার অবর্তমানে রোগী ভর্তি হয়েছে।
দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তার
১৪ জুন রাতে চিকিৎসকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী। এতে অভিযোগ করা হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছেন তাদের নবজাতক সন্তানও।
পরের দিন গ্রেপ্তার হন শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও মুনা সাহা। সেদিনই জামিন নাচক করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়।
২১ জুন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের কাছে ফের জামিন চেয়ে আবেদন করেন মুনা সাহা। সেদিনও বিচারক তা ফিরিয়ে দেন।
এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন চিকিৎসক মাকসুদা ফরিদা আক্তার মিলি, সংযুক্তা সাহার সহযোগী মো. জমির ও মো. এহসান এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজ।
আসামিদের মধ্যে চিকিৎসক মিলি গত ২৬ জুন আগাম জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে যান। গত ৫ জুলাই এক আদেশে তাকে চার সপ্তাহের আগামী জামিন দিয়ে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
পুরনো খবর
নবজাতকের মৃত্যু: সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক কারাগারে
আঁখির চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল, স্বীকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের
সংযুক্তা সাহার নামে রোগী ভর্তি হয়নি: সেন্ট্রাল হাসপাতাল
নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর দায় হাসপাতালের: সংযুক্তা সাহা
‘বেঁচে থাকার সাহসটুকু হারিয়ে ফেলেছি’: বিএমডিসিতে আঁখির স্বামীর অভিযোগ
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সন্তান হারানো আঁখিও চলে গেলেন
সংযুক্তা সাহার নামে রোগী ভর্তি হয়নি: সেন্ট্রাল হাসপাতাল
নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর দায় হাসপাতালের: সংযুক্তা সাহা
বাবার কবরের পাশে সন্তানসহ শায়িত আঁখি
আঁখির মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে, বলছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক
ডা. সংযুক্তার বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা সেন্ট্রাল হাসপাতালের