মামুনুর রশিদ বলেন, সংযুক্তা সাহা প্রতিদিন কতজন রোগী দেখেন, তিনি কত টাকা হাসপাতাল থেকে পান এ সংক্রান্ত সব তথ্যপ্রমাণ হাসপাতালের কাছে আছে। তারা সময়মতো জবাব দেবেন।
Published : 21 Jun 2023, 01:11 PM
সন্তান জন্ম দিতে এসে কুমিল্লার গৃহবধূ মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় আলোচনায় থাকা ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক সংযুক্তা সাহা বিদেশে যাওয়ার আগে তার রোগীদের দেখার দায়িত্ব অন্য চিকিৎসকদের কাছে দিয়ে গিয়েছিলেন।
সংযুক্তা সাহা ঘটনার সময় বিদেশে থাকার পরও আঁখিকে তার নাম করে ভর্তি করানোর যে অভিযোগ তুলেছেন, তার জবাবে বুধবার এমনটাই দাবি করেছেন সেন্ট্রাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ।
মঙ্গলবার চিকিৎসক সংযুক্তা তার বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসে এই ঘটনার দায় হাসপাতালের ওপর চাপান।
তিনি বলেন, আঁখিকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন তিনি দেশেই ছিলেন না। তাকে না জানিয়ে ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। সুতরাং শিশু ও মায়ের মৃত্যুতে তার কোনো দায় ছিল না।
“যে মানুষটা দেশেই নাই তার নাম করে কেন রোগী ভর্তি করবেন? এটা কার স্বার্থে? আমি যদি অপারেশন না করি,যদি নাই থাকি, তাহলে রোগী ভর্তি করালেন কোন আক্কেলে? এটা অবশ্যই একটা বেআইনি ব্যবস্থা। এ ঘটনার জন্য একমাত্র দায়ী সেন্ট্রাল হাসপাতাল,” বলেন তিনি।
সংযুক্তা সাহার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বুধবার সেন্ট্রাল হাসপাতাল সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়ায় তা পরে স্থগিত করার কথা জানান মামুনুর রশিদ।
“চার সদস্যের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার বসেছিলেন কিন্তু রিপোর্টটা অসম্পূর্ণ থাকায় তারা আমাদের চেয়ারম্যানের কাছে আরও সাতদিন সময় চেয়েছেন। রিপোর্টটা হয়ে গেলে আমরা আপনাদের জানাব,” বলেন তিনি।
মামুনুর রশিদ বলেন, সংযুক্তা সাহা প্রতিদিন কতজন রোগী দেখেন, তিনি কত টাকা হাসপাতাল থেকে পান এ সংক্রান্ত সব তথ্যপ্রমাণ হাসপাতালের কাছে আছে। তারা সময়মতো জবাব দেবেন।
“তিনি বলেছেন, আমি একটা কাউন্টার বলব। এটা আমরা করব না। আমরা সব কাগজপত্র দিয়ে দেব। আপনারা দেখে নিবেন।”
গত রোববার ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কুমিল্লার তরুণী মাহবুবা আক্তার আঁখি, যিনি স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে ৯ জুন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসেছিলেন।
দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পরও তার নাম করে রোগী ভর্তি করা হয়েছে- সংযুক্তা সাহার এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উনার নামে কোনো রোগী ভর্তি করা হয়নি। কিন্তু উনার কাছে যে এক্সিস্টিং রোগী ছিল সেগুলো তিনি প্রফেসর সামিনা এবং মিলি ম্যাডামের কাছে অ্যাসাইন করে গেছেন। উনারা রাউন্ড দেবেন ট্রিটমেন্টের কিন্তু সংযুক্তা ম্যাডামের প্রটোকল মেনে। উনার নামে কোনো রোগী ভর্তি হয়েছে কিনা সেটা কাগজই কথা বলবে।”
মামুনুর রশিদ বলেন, সংযুক্তা সাহা দেশের বাইরে গেলেও নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালকে জানাননি।
“কোনো কনসালটেন্ট দেশের বাইরে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ব্যক্তিগতভাবে একটা লিখিত নোটিস দিতে হয়। এটা আমাদের সিস্টেম। লিখিত নোটিস পেলে আমরা একটা নোটিস করে বোর্ডে লাগিয়ে দেই যে ওই চিকিৎসক এত তারিখ থেকে এত তারিখ পর্যন্ত চেম্বার করবেন না। একটা সার্কুলার করা হয়। উনি অফিসিয়ালি কাউকে বলে যাননি, তিনি নাকি ফেসবুকে এটা জানিয়েছেন।”
সেন্ট্রাল হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংযুক্তা সাহার অভিযোগের বিষয়ে জানতে মামুনুর রশিদ বলেন, “হাসপাতালটি ২৫ বছর ধরে চলছে। এখানে বড় বড় চিকিৎসকরা রোগী দেখেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানে যদি কোনোকিছুর ঘাটতি থাকত তাহলে এসব দেশসেরা চিকিৎসকরা এখানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন? এটাও আপনাদের কাছে প্রশ্ন।”
আলোচিত এই ঘটনায় করা মামলায় ডা. সংযুক্তা সাহার দুই সহযোগী শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও মুনা সাহাকে গ্রেপ্তার করেছে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতি আছে বলে সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিল সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:
নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর দায় হাসপাতালের: সংযুক্তা সাহা
বাবার কবরের পাশে সন্তানসহ শায়িত আঁখি
আঁখির মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে, বলছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক
আঁখির চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল, স্বীকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সন্তান হারানো আঁখিও চলে গেলেন
‘ভালো’ চিকিৎসা নিতে এসে হারালেন সন্তান, নিজেও সিসিইউতে
নবজাতকের মৃত্যু: সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক কারাগারে
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব অস্ত্রোপচার বন্ধ
সোশাল মিডিয়ায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রচারে মানা
পসার বাড়াতে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারে চিকিৎসকরা, কতটা নীতিসিদ্ধ?