বিদায় বেলায় একরাম খুন নিয়ে প্রশ্নে যা বললেন বেনজীর

একরামুল হক কারও ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে খুন হননি বলে দাবি করেছেন বেনজীর আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2022, 12:23 PM
Updated : 29 Sept 2022, 12:23 PM

বিচারবহির্ভূত যে হত্যাকাণ্ডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বেনজীর আহমেদ, চাকরি থেকে বিদায় নেওয়ার কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাইলেন তিনি।

পুলিশ প্রধান হিসেবে বিদায় নেওয়ার দিন বৃহস্পতিবার রাজারবাগে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বেনজীর। নানা প্রশ্নের সঙ্গে একরাম নিহত হওয়ার চার বছর আগের ঘটনা নিয়েও তার প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, “এটা একটা লিগ্যাল বিষয়। বিষয়টা অন্যায্য, অনৈতিক- এ ধরনের চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত আমার ব্যাক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই।”

২০১৮ সালের ২৬ মে মাদকবিরোধী অভিযানে র‍্যাবের সঙ্গে কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন কক্সবাজারের টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর, যুবলীগ নেতা একরামুল হক।

তার মৃত্যুর সময়কার একটি অডিও প্রকাশ পেলে তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অভিযোগ ওঠে, র‌্যাব পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে।

Also Read: ‘বন্দুকযুদ্ধে’ টেকনাফের কাউন্সিলরসহ নিহত ২

Also Read: একরামের মৃত্যু: ভয়ঙ্কর অডিওতে ‘অশনি সংকেত’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক সে ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ধরনের সব হত্যাকাণ্ডের বিচারিক তদন্ত করতে বলেছিলেন।

তখন র‌্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বেনজীর। দুই বছর পর তিনি পুলিশ মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব পান। বৃহস্পতিবার ছিল তার সরকারি চাকরির শেষ দিন।

গত বছর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র একরামকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবের সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হিসেবে বেনজীরে নামে নিষেধাজ্ঞায় আসে। আসে কক্সবাজারে র‌্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন আহমেদের নামও।

Also Read: র‌্যাব ও সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

Also Read: র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা উঠতে সময় লাগবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকাকালে একরাম খুন হওয়ার বিষয়টি তুলে বেনজীরকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সেই ঘটনাটি তাকে নাড়া দেয় কি না?

বেনজীর বলেন, “বিষয়টা হল যে এটা আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি। এটা ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।

“তাদের সঙ্গে কিন্তু যে ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন, তার কিন্তু ব্যক্তিগত বিরোধ নেই, ব্যক্তিগত বিষয়ও না। এটা আমরা অনেকেই চিহ্নিত করার চেষ্টা করি ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু সেটা না।”

তিনি বলেন, “আমাদের দেখার দায়িত্ব আমাদের সহকর্মী কেউ ম্যান্ডেটের বাইরে গেছেন কি না? যদি ‘ওভার স্টেপ’ করে থাকে, তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

একরামের ঘটনায় কোনো তদন্ত চোখে না পড়ার কথা এক সাংবাদিক জানালে প্রতিক্রিয়ায় বেনজীর দাবি করেন, একাধিক তদন্ত হয়েছে।

“ম্যাজিস্ট্রেটের এনকোয়েরি হয়েছে, আমি যখন চলে আসি, তখন ইন্টারনাল এনকোয়ারির আদেশ দিয়ে এসেছি। তদন্ত হয়নি, এ কথা ঠিক না। বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে।”

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা কখনই মানবিক সীমাবদ্ধতার কারণে পরিপূর্ণভাবে পারফেক্ট হতে পারব না। আমাদের লক্ষ্য হবে হিউম্যান বিয়িং হিসাবে সব সময় পারফেকশনের কাছে পৌঁছানো।”

আরেক প্রশ্নে জবাবে বেনজীর বলেন, “কারও কাছেই জাদুর কাঠি নেই যে আমি সব কিছু অর্জন করে ফেলব। অর্জনের বিষয়টা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া এবং কখনও শেষ না হওয়া প্রক্রিয়া। অর্জনের প্রক্রিয়া কখনও থেমে থাকে না। সংগঠন হল জীবন্ত বিষয়, আর জীবন্ত বিষয়ের বৈশিষ্ট্য হল ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।”

সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে গেলে তাকে অনেকটা থামিয়ে তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি, এটা নিয়ে আমি যুক্তরাষ্ট্রেই কথা বলেছি।”

Also Read: আজ কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই: বিদায়ী আইজিপি

পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বেনজীর বলেন, “পুলিশের কাছে যে অস্ত্র দেওয়া হয়, তা নিজের জনগণের নিরাপত্তার জন্য। পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অস্ত্র ব্যবহার করবে, এটাই নিয়ম। আর অস্ত্র ব্যবহার সঠিক হয়েছে, না বেঠিক হয়েছে, তা তদন্তই বলে দেবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।”

দেশের আইনে মানবাধিকারের সুরক্ষা দেওয়ার বিধান থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধানে মানবাধিকার বিষয়ে এত বিশদভাবে বলা আছে যা বিশ্বের অন্য কোন সংবিধানে আছে কি না …

“এদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজের বিভাগের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে, সমাজের কাছে, আদালতের কাছে দায়বদ্ধ।”

মানবাধিকার সুরক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে পুলিশ কাজ করছে জানিয়ে বেনজীর বলেন, “এদেশের এনজিওরা কয়েকশ কোটি টাকা এনেছে বাইরে থেকে মানবাধিকারের নামে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য।

“যখনই ডেকেছে পুলিশ প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তার মানে মানবাধিকারের ব্যাপারে সবসময় খোলা মনে কাজ করেছে।”