র‌্যাব ও সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

র‌্যাবের ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ ঘটনায় এ বাহিনী, এর সাবেক প্রধান, বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2021, 07:31 PM
Updated : 12 Dec 2021, 03:09 AM

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না।

২০০৪ সালে গঠিত র‌্যাবের বিরুদ্ধে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার’ অভিযোগ অনেক পুরনো। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে কঠোর সমালোচনাও করেছে।

বরাবরের মতই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ১৭ কোটির জনগণের দেশে কিছু অপরাধী ‘থেকেই থাকে’।

“আর মাদক কারবারিরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। আমাদের প্রশিক্ষিত বাহিনী অভিযান চালালে তারা অস্ত্র ব্যবহার করে এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং হতাহতের ঘটনাও ঘটে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিটি ঘটনা ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্ত হয়। কারো কোনো গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সুতরাং ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ কথাটি ঠিক নয়।”

শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।

আর আলাদাভাবে বিভিন্ন দেশের ১২ কর্মকর্তার নাম যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করার কথা বলেছে সে দেশের পররাষ্ট্র দপ্তর।

এই তালিকায় র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমদের সঙ্গে কক্সবাজারে র‌্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন আহমেদের নাম এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ২০১৮ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হককে ‘বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার মত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সম্পৃক্ততরার জন্য’ তাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। 

এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হওয়ায় বেনজীর আহমদ ও মিফতা উদ্দিন আহমেদ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার পাবেন না বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

আর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের আওতায় যে ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, সেখানে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাব, এর সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক ও বর্তমান আরও পাঁচ কর্মকর্তার নাম।

ওই পাঁচ কর্মকর্তা হলেন: র‌্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর বলছে, র‌্যাব “গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, সহযোগী বা পরোক্ষভাবে জড়িত।”

আর র‌্যাবের ছয় কর্মকর্তার বিষয়ে সেখানে বলা হয়েছে, “তারা র‌্যাবের নেতৃত্বে বা কর্মকর্তা হিসাবে আছেন বা ছিলেন। তাদের দায়িত্ব পালনের সময় র‌্যাব বা এর সদস্যরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।”

এই নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোনো সম্পদ থেকে থাকলে তা অবরুদ্ধ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন না।

অর্থ দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে র‌্যাবের মাধ্যমে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ’ রয়েছে, যা আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ‘খাটো করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলেছে’।

এতে বলা হয়, “বেসরকারি সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, র‌্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে ছয় শতাধিক গুম এবং ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ছয়শ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য দায়ী “।