গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে অসন্তোষ যুক্তরাষ্ট্রের

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে স্থান পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2014, 09:44 PM
Updated : 27 Feb 2014, 10:59 PM

বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রিতা, গণমাধ্যম মত প্রকাশের ওপর সরকারের কড়াকড়ির বিষয়টিও উঠে আসে।

এছাড়া নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়টিও প্রতিবেদনে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়।

২০১৩ সালের ঘটনাবলি তুলে ধরে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধানে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাংলাদেশে সরকারি বাহিনী বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ না করার কথাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো ছাড় না দেয়া এবং সুষ্ঠু তদন্তের কথা বলা হলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ না দেখার কথাও বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।

দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র, গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংগঠন এবং সরকারের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, ২০১৩ সালে ৭০ জনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪০ জনকে হত্যার পেছনে রয়েছে বিশেষ বাহিনী র‌্যাব।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৬৯ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১৭ হাজার ১৬১ জন।

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম নিয়ে প্রতিবেদনে অধিকাররের দেয়া বিভিন্ন পরিসংখ্যানকে গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর, যে সংগঠনটির বিরুদ্ধে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ এনেছে সরকার।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গুম ও অপহরণ অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করে অধিকার এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

র‌্যাব, পুলিশ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর দ্বারা জেল ও কারাগারে বন্দি নির্যাতনের ঘটনাও মানবাধিকার প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে। জেলখানার পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর, নির্মমও বলা হচ্ছে তাতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের মার্চের ১২ তারিখে বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ৩ হাজার ২১৫ ব্যক্তিকে কোনো ধরনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, যাদের অনেকেই দিনমজুর, শ্রমিক, হকার, রিকশা চালক কিংবা দোকানি।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে সরকার ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের আইনজীবীদের ওপর 'চাপ প্রয়োগ' করছে বলেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

এতে বিচারের দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি এখানকার বিচারকদের কম 'সম্মানী' প্রাপ্তির বিষয়টিও বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিতে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভি স্বাধীন নয়, যা দেশের ৬০ ভাগ মানুষের জন্য একমাত্র গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।

বেসরকারি টিভি বাংলাভিশন, ইসলামিক এবং একুশে টিভি বিরোধীদলের কর্মসূচির দেখাতে চাইলে বাধার সম্মুখীন হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার নির্দেশে দুটি অনুষ্ঠান স্থগিত না করায় রাজস্ব বোর্ড এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলে উদাহরণ টানা হয়েছে।

সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় বিষয়টি উঠে এসেছে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে। 

সরকার থেকে কিছু ফেসবুক পেজ বন্ধ করে দেয়ার কথা উদাহরণ হিসেবে টানলেও ইন্টারনেট মিডিয়ায় স্বাধীনভাবেই বাংলাদেশিরা তাদের মত প্রকাশ করতে পারছে বলে মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন মন্তব্য করেছে।

রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদলের সংসদ বর্জন এবং তাদের কর্মসূচিতে সরকারের বাধা দানের কথা এসেছে।