শুক্রবার রংপুরে শীতবস্ত্র বিতরণের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব প্রধানের এ বক্তব্য আসে।
বেনজীর বলেন, র্যাবের কিছু সদস্য ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় কাজ করেছে। সেটা তাদের দায়। সেটা কিন্তু র্যাবের দায় নয়।
“সাত খুনের পর প্রথম র্যাবের তদন্তেই জড়িতদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের র্যাব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাব তাদের কোনো ধরনের আশ্রয়-প্রশয় দেয়নি।”
২০০৪ সালে পুলিশের বিশেষ ইউনিট হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা শুনতে হচ্ছে র্যাবকে। এরপর ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে খুন করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেওয়ায় র্যাবের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠলে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়।
ওই হত্যামামলার রায়ে গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আদালত র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, দুই ক্যাম্প কমান্ডার আরিফ হোসেন ও এম এম রানাসহ বাহিনীর ২৫ সদস্যকে সাজা দেয়। তাদের মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং নয় সদস্যের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে।
ওই রায়ের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছিলেন, র্যাব সদস্যদের সাজায় বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়নি।
বেনজীর বলেন, “মানুষকে ফ্যাক্টরি থেকে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে আনা হয় না। কেউ যদি অন্যায় প্রলোভনে প্রভাবিত হয়, সেটা তার দায়, র্যাবের বিষয় নয়।”
গত ১৩ বছরে র্যাবের যেসব সদস্য ‘অপকর্মে’ লিপ্ত হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে দাবি করে মহাপরিচালক বলেন, ‘শত শত’ র্যাব সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, মামলা করা হয়েছে, চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে র্যাব খুবই কঠোর।
যারা এর বাইরে থাকবেন, তাদেরকে র্যাব কখনও ‘ওন’ করেনি, ভভিষ্যতেও করবে না বলে মন্তব্য করেন বেনজীর।
এ বাহিনীতে কোনো ধরনের অন্যায় সহ্য করবে না বলে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “যে কোনো মূল্যে আমরা র্যাবকে ক্লিন রাখব। এটাই এ বাহিনীর প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞা।”
উত্তরাঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে র্যাবের ডিজি বলেন, জঙ্গিদের একটি বড় অংশ উত্তরাঞ্চলে- এটা ঠিক। তবে কেন এ অঞ্চলেই জঙ্গির উত্থান, ২০১৫ সালে কেন এ অঞ্চলেই নতুন করে জঙ্গি হামলা শুরু হল- এটা সামাজিক গবেষণার বিষয়।
এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে র্যাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে গবেষণা চালাচ্ছে জানিয়ে বেনজীর বলেন, এ গবেষণার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান তারা বের করতে চান।
সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল সংখ্যক জঙ্গি নিহত ও গ্রেপ্তার হলেও ভবিষ্যতে আবারও আবারও জঙ্গিদের মাথাচাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না র্যাব মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, “২০০৪ সালেও জঙ্গিদের দমন করা হয়েছিল। ১২ বছর পর আবার তাদের উত্থান ঘটেছে, উম্মেষ ঘটেছে। তারা শক্তি সঞ্চয় করে পুনর্গঠিত হয়েছে। হামলা করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। সরকারের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমে জঙ্গিদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে।”
র্যাবের ডিজি এ অনুষ্ঠানে দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ, র্যাব-১৩ এর অধিনায়ক কমান্ডার আতিক উল্যাহ, রংপুর রেঞ্জ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত উপ-মহাপরিদর্শক বশির আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।