বেনজীর আহমেদ তার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের দেশে এক ধরনের নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চা ছিল, এখনও আছে।”
Published : 29 Sep 2022, 03:50 PM
তিন দশকের বেশি সময় পুলিশ বিভাগে দায়িত্ব পালন করে বিদায়বেলায় আইজিপি বেনজীর আহমেদ বললেন, ‘নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চা’ নিয়ে যাবার বেলা কোনো অভিযোগ তিনি করতে চান না।
বৃহস্পতিবার নিজের শেষ কার্যদিবসে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন নানা কারণে আলোচিত পুলিশের এই মহাপরিদর্শক।
দায়িত্ব পালনকালে অনেক ‘চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলা করতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে এক ধরনের নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চা ছিল, এখনও আছে।
“সেই এক শ্রেণির মানুষের নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চায়, যারা নাকি অন্যায়ভাবে ও আযৌক্তিকভাবে তাদের বিপক্ষে আবিষ্কার করেছেন কিছু লোক… তাদের প্রতিও আজ আমি বলতে চাই, কোনো অভিযোগ নাই, কোনো অনুযোগ নাই।
“তারাও ভালো থাকবেন, সে প্রত্যাশা করব। কারণ সবাইকে নিয়েই আমাদের আজকের বাংলাদেশ।”
বেনজীর বলেন, “সবাই মিলেই বাংলাদেশ। আমার এই ভালোবাসার বাংলাদেশ। আমাদের এই ভালোবাসার বাংলাদেশ। সবাইকে মিলিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
“একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বাস্তবায়নের জন্য আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে যে যেখানে আছি, সেখান থেকে দায়িত্ব পালন করব।”
১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়া বেনজীর আহমেদ পুলিশ মহাপরিদর্শকের দায়িত্বে আসনে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল। তার আগে প্রায় সাড়ে চার বছর এলিট ফোর্স র্যাবের নেতৃত্ব দেন।
‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র গত ডিসেম্বরে র্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিলে ওই তালিকায় র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে বেনজীর আহমেদের নামও আসে।
ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ৩১ অগাস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের পুলিশ প্রধান সম্মেলনে বেনজীরের অংশ নেওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিশ্চিত করায় ওই আয়োজনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তিনি নিউ ইয়র্কে এক নাগরিক সংবর্ধনাতেও যোগ দেন।
সেই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি মার্কিন প্রশাসন অথবা আমেরিকানদের দোষারোপ করতে চাই না। কারণ এটা করেছে তারাই, যারা সত্তর সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দেয়নি, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। ওই গোষ্ঠী বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চারটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। সেই ভাড়াটে ফার্ম টানা তিন বছর চেষ্টা করেছে কথিত স্যাংশনের জন্য।”
বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় শুক্রবার সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাচ্ছেন বেনজীর আহমেদ। ফলে আগের দিন বৃহস্পতিবারই ছিল তার শেষ কর্মদিবস।
নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে বাংলাদেশ আজকের পর্যায়ে এসেছে মন্তব্য করে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “১৮ ডলার রিজার্ভ থেকে ৪৯ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে এসে পৌঁছেছে দেশ। প্রায় তিন হাজার ডলারের মাথাপিছু আয়ে পৌঁছেছে। এসময়ে নানা দারিদ্র্য, অসুখ-বিসুখ, বঞ্চনা দেখেছে দেশ। অনেক ধরনের রাজনীতির খেলা হয়েছে।”
পুলিশ বিভাগে নিজের ফেলে আসা পথের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “৩৪ বছর ৫ মাস ১৬ দিন বাংলাদেশ পুলিশে কাজ করেছি। এর মধ্যে ১২ বছর ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেছি। পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ১২ বছরের পথচলায় অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেছি। এ দেশের নাগরিকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনে অনেক চ্যালেঞ্জের মাঝে ফরমালিনবিরোধী অভিযান ছিল তার ‘বড় চ্যালেঞ্জ’। ফরমালিন মুক্ত করতে গিয়ে হাজার হাজার টন, মাছ, ফল ও সবজি ধ্বংস করতে হয়েছে।
“ফরমালিনযুক্ত সব ধরনের খাবারের জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযানের কারণে আগে প্রায় ৭০০ টন ফরমালিন আমদানি হত। এখন ১০০ টনের মতো আমদানি হচ্ছে। বাকি ৬০০ টন খাবারে মেশানো হত। এই আমদানি কমে যাওয়া একটা বড় সাফল্য।”
“এছাড়া সুন্দরবনের জলদস্যুমুক্ত করারটাও চ্যালেঞ্জের একটি কাজ ছিল। চারশ বছর আগেও জলদস্যু ছিল। আজ দস্যু মুক্ত সুন্দরবন, “ বলেন তিনি।
অবসরের পর রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সংসদে যেতে আগ্রহ রয়েছে কি না- এক সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে প্রথমে হেসে ফেলেন বেনজীর।
পরে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন।
“পুলিশ কমিশনার হিসাবে একবার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি, র্যাবের ডিজি হিসাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি, সর্বশেষ আইজি হিসাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এসেছি। চাকরি জীবনটাকে এনজয় করেছি।”