পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, যে কোনো সহিংসতার ঘটনার পূর্ণ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং জড়িতদের জবাবদিহিতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করছি।
Published : 18 Jul 2023, 01:08 PM
ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক ব্রিফিংয়ে।
সোমবার ওই ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
“যে কোনো সহিংসতার ঘটনার পূর্ণ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করছি।”
এই উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালীন সোমবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে হামলার শিকার হন হিরো আলম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দিতে স্কুলের মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে সেলফি তোলেন হিরো আলম। তখন নৌকার ব্যাজধারী কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ধরেন এবং বলেন, ‘এটা টিকটক ভিডিও বানানোর জায়গা না’। এরপর হিরো আলমকে ধাওয়া শুরু করেন।
তখন কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে ধরে স্কুলের গেইটের বাইরে দিয়ে আসেন। এরপর হিরো আলমকে সড়কে ফেলে বেধড়ক পেটানো হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও কনটেন্ট বানিয়ে আলোচনায় আসা হিরো আলম নিজ এলাকা বগুড়ার ভোটার হওয়ায় এই উপনির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ভোটের পরিবেশ দেখছিলেন তিনি। পরে নির্বাচনে ভোটগ্রহণের শেষ দিকে হামলার শিকার হলে ওই ঘটনার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
হিরো আলমের ওপর হামলা এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মাঝপথে নির্বাচন বর্জনের মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহম্মদ এ আরাফাত। নির্বাচনে ভোট পড়েছে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ।
হামলার ওই ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে হিরো আলমের নাম না উল্লেখ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার প্রসঙ্গটি তোলেন এক প্রশ্নকারী।
মুখপাত্র মিলারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সফর থেকে ফেরার পর বাংলাদেশ সরকার আবার হামলার ধারায় ফিরেছে। গতকাল একটি উপ-নির্বাচন হয়েছে। যদিও প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছে…এমনকি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপর হামলা হয়েছে, তিনি এখন হাসপাতালে এবং (নির্বাচনে) ১০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে।
“যেখানে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ছিল না এবং এখন উপ-নির্বাচনই অবাধ ও নিরপেক্ষ না এবং প্রার্থীর উপর হামলা হয়েছে, আপনারা কীভাবে বিশ্বাস করেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করবে? এক্ষেত্রে আপনার অবস্থান কী? আপনারা কি এটা নজরে রাখছেন?”
জবাবে মিলার বলেন, “আগেও আমরা বলেছি, আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে এবং আমরা এটার নিবিড় পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখব।”
ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সামনে বিক্ষোভ এবং ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত এক ছাত্রদল নেতার নোয়াখালীর বাড়িতে হামলার ঘটনার প্রসঙ্গেও জানতে চান ওই প্রশ্নকারী।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র তখন বলেন, “আমি পুনরায় বলব, এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান রাজনৈতিক নির্বাচনে নেই।”