মামুন হত্যা: রবিউলসহ আসামিদের বিরুদ্ধে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণেই ৮ মাস

পুলিশ কর্মকর্তা খুনের এই মামলায় আরাভ খান বা রবিউলকে পলাতক দেখিয়ে চলছে বিচার।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2023, 01:36 PM
Updated : 21 March 2023, 01:36 PM

পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যামামলায় ১৬ মাসে শেষ হল বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ। দুবাইয়ে থাকা আসামি রবিউল ইসলামের সঙ্গে মামলাটিও নতুন করে উঠেছে আলোচনায়।

আট আসামির মধ্যে রবিউল বিদেশে পালিয়ে আরাভ খান নাম নিয়ে দুবাইয়ে গহনার দোকান খুলে জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে দিয়ে উদ্বোধন করিয়ে এখন রয়েছেন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে।

এর মধ্যেই মঙ্গলবার ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদেরের আদালতে ছিল মামলার শুনানির দিন।

মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলমের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর বিচারক আগামী ৪ জুন পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন রেখেছেন।

২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকার বনানীতে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) মামুন খুন হওয়ার পর তার ভাই জাহাঙ্গীর মামলাটি করেন।

পরের বছর ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তার দুই বছর পর ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।

আট মাস আগে গত বছরের ২৮ জুলাই বাদী জাহাঙ্গীরের জবানবন্দি দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল তার সাক্ষ্যগ্রহণ, যা শেষ হল মঙ্গলবার।

কারাগারে থাকা ছয় আসামির উপস্থিতিতে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুস সাত্তার দুলাল, আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন, ফারুক আহাম্মদ শুনানিতে ছিলেন।

রবিউলের পক্ষে নবনিযুক্ত আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ মামলায় আসামিদের নাম-ঠিকানা না থাকা নিয়ে বাদীকে প্রশ্ন করেন। ঘটনাস্থল নিয়েও নানা প্রশ্ন করা হয় বাদীকে।

আইনজীবীরা জানান, বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলায় ৩৮ জনের মধ্যে একজনের সাক্ষ্য শেষ হল।

এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হাসান ও দিদার পাঠান।

আসামিদের মধ্যে পলাতক রবিউল এবং তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া।

মামলার পর রবিউল ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট করিয়ে দুবাইয়ে পাড়ি জমান বলে সম্প্রতি প্রকাশ পায়।

Also Read: হত্যার আসামি রবিউলই দুবাইয়ের আরাভ খান, বলছে পুলিশ

Also Read: আরাভ ‘খুনের আসামি’ জেনেই দুবাই গেছেন সাকিব: ডিবি

Also Read: আরাভ নামে কাউকে চিনি না: বেনজীর

Also Read: ‘আরাভের নামে’ ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করতে পুলিশের চিঠি

সম্প্রতি দুবাইয়ে ঘটা করে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ বিনোদন জগতের তারকারা ছুটে গেলে পুলিশ নিশ্চিত হয়, এই আরাভই পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যার আসামি রবিউল।

আরাভ নিজেও পরে সোশাল মিডিয়ায় নিজের বিরুদ্ধে দেশে মামলার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, তার বনানীর অফিসে পাঁচ বছর হত্যাকাণ্ডটি ঘটলেও তিনি নিজে জড়িত ছিলেন না।

এদিকে আরাভের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির উদ্যোগ নেয় পুলিশ। সেই নোটিস ইতোমধ্যে জারি হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রবিউলকে পলাতক দেখিয়ে এখন মামুন খুনের বিচার চলছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। তার মধ্যেই তিনি গত এক বছরে দুই বার বাংলাদেশে এসেছিলেন বলে খবর এসেছে সংবাদ মাধ্যমে।

মামলার অভিযোগপত্রে খুনের বিবরণ

হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৭ জুলাই বনানীর ২ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর ভবনে আসামি দিদার, স্বপন, রহমত উল্লাহ পুলিশ কর্মকর্তা মামুনের হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে ওই তিন আসামির সঙ্গে মিজান, আতিক ও সারোয়ার যুক্ত হয়ে মামুনকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। রাত ১০টার দিকে আসামি কেয়া (রবিউলের স্ত্রী) বাসা থেকে চলে যান। এরপর রাতের কোনো একসময় রবিউলও চলে যান।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতে টিভি অনুষ্ঠানের এক প্রযোজককে ওই বাড়িতে রবিউলের অফিসে ডেকে নিয়েছিলেন আসামিরা। মামুন ছিলেন ওই প্রযোজকের পরিচিত, তার কথায় তিনিও সেখানে গিয়েছিলেন।

মামুন মারা যাওয়ার পর তার লাশ গুমের পরিকল্পনা হয়েছিল উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, রহমত উল্লাহ সবাইকে বলেন যে মরদেহ গুম না করলে ‘তারা সবাই বিপদে পড়ে যাবেন’। কারণ মামুন তার বন্ধু, তিনিই মামুনকে ফোন করে ডেকে এনেছিলেন।

এরপর রবিউলকে ফোনে বিষয়টি জানালে দুটি বস্তা ও একটি সাদা কাপড় নিয়ে তিনি পুনরায় আসেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তার বিবরণ অনুযায়ী, সকাল ৭টার দিকে মামুনের বস্তাবন্দি লাশটি লিফটে করে নিচে নামিয়ে আনেন আসামিরা, তোলেন একটি গাড়িতে। রহমত উল্লাহ ওই গাড়ি চালিয়েছিলেন। গাড়িতে ছিলেন দিদার, স্বপন ও আতিক। রবিউল তার স্ত্রী কেয়াকে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে করে দিক-নির্দেশনা দেন।

অভিযোগপত্র অনুযায়ী, পরে রহমত উল্লাহ গাড়ি চালিয়ে যান গাজীপুরের দিকে। গাজীপুরের শিমুলতলীতে গিয়ে থাকেন দিনভর। পরে রাতে উলুখোলা থেকে আবদুল্লাহপুর যাওয়ার পথে একটি বাঁশবাগানে পেট্রোল ঢেলে মামুনের লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার তিন দিন পর ১০ জুলাই গাজীপুরের ওই জঙ্গলে মামুনের দেহাবশেষের হদিস মেলে। এরপরই মামলা হয়।