দুবাইয়ের গয়নার দোকান আরাভ জুয়েলার্সের মালিক ‘আরাভ খান’ এর আসল নাম যে রবিউল ইসলাম এবং তিনি যে এক পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার আসামি- এই তথ্য সাকিব আল হাসানকে জানানো হয়েছিল বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটারকে তারপরও দুবাইয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখা যায়নি, বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বুধবার দুবাইয়ে আরাভ খানের দোকান উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন সাকিব। ওই অনুষ্ঠানে দেশের বিনোদন জগতের আরও কয়েকজনও ছিলেন।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “সাকিব আল হাসানসহ অন্যান্যদের জানানো হয়েছে। জানানোর পরেও তারা কেন এরকম একটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গেলেন, তা আমি জানি না। এটা দুঃখজনক।
“আমরা এত করে বলার পরেও তারা আরাভ খানের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এটা তারা কেন করেছেন জানি না।”
নানা ধরনের আলোচনার মধ্যেও এই অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিষয়ে সাকিব কোনো বক্তব্য দেননি। বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কয়েকবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে তাকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি, এসএমএস পাঠালেও সাড়া দেননি।
আরাভের গয়নার দোকানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব ছাড়াও আমন্ত্রিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস, অভিনেত্রী প্রার্থনা ফারদীন দীঘি, ইউটিউবার হিরো আলম।
আরাভ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিলাসবহুল গয়নার দোকান কীভাবে দিলেন, সেই প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি অনেকে এটাও জানতে চাইছে, তারকাদের তিনি ভেড়ালেন কী করে?
আরাভের স্বর্ণের ব্যবসায় সাকিবের বিনিয়োগ আছে কি না- এমন প্রশ্নে হারুন বলেন, “এটা আমি জানি না। তবে আমরা তথ্য নিচ্ছি কেন হিরো আলম, সাকিব, দীঘি আবার শুনছি রাজ নামেরও কেউ… তারা কেন সেখানে গেলেন। আমাদের তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে তাদের আমরা যোগাযোগ করব।”
আরাভ খান অন্য কারও কাছ থেকে অর্থ পাচ্ছেন কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, “এগুলো আমরা তদন্ত করছি।”
১২টি মামলায় পরোয়ানা
দেশে আরাভ খানের (দেশে রবিউল ইসলাম নামে) বিরুদ্ধে পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যাসহ ১২টির মতো মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে বলে ডিবি কর্মকর্তা হারুন জানান।
এরমধ্যে একটি মামলা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের।
২০১৮ সালের ৮ জুলাই বন্ধু রহমত উল্লাহ সঙ্গে বনানীর একটি বাসায় গিয়ে খুন হন মামুন। পরদিন তার মরদেহ বস্তায় ভরে উলুখোলার জঙ্গলে নিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়।
এই ঘটনার তদন্ত করে পরের বছর এপ্রিলে রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
রবিউলের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার হিরন ইউনিয়নে। তিনি ‘সোহাগ মোল্লা’ নামেও এলাকায় পরিচিত ছিলেন।
মামুন হত্যার পর তাকে খুঁজতে এলাকায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সোহাগই ঢাকায় রবিউল, আপন, হৃদয়সহ বিভিন্ন নামে পরিচয় দিয়েছেন।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের একজন পুলিশ কর্মকর্তা মামুনকে শুধু তারা হত্যাই করে নাই, লাশটি যেন না পাওয়া যায়, সেজন্য তারা কালীগঞ্জের জঙ্গলে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে চলে আসে।
“এই মামলাটি ডিবি তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে।পরবর্তীতে সে নকল একজনকে আপন সাজিয়ে জেলখানায় পাঠায়। যখন ডিবির তদন্তে প্রমাণ হয়, এই আপন প্রকৃত ব্যক্তি নন, ততদিনে সে (আরাভ) ভারতের পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিল।”
দুবাইয়ের আরাভই পুলিশ হত্যার আসামি রবিউল, তা কীভাবে বুঝলেন- এমন প্রশ্নে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা সবসময়ই তার খোঁজখবর রাখছিলেন। এরমধ্যে সাকিব আল হাসানসহ অনেকের ফেইসবুকে তাকে দেখা যায়। তিনিও ফেইসবুকে অ্যাক্টিভ ছিলেন।”
‘আরাভকে ফেরানো হবে’
আরাভকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, “আমরা আমাদের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
মামুন হত্যা মামলা ছাড়া তার বিরুদ্ধে আর কী কী মামলা আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেগুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি।”
রবিউলের (আরাভ) বিরুদ্ধে কী কী ধরনের অভিযোগ আছে জানতে চাইলে কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. জাকারিয়া বলেন, “সোহাগ মোল্লা ওরফে রবিউলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন, চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে নয়টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কোটালীপাড়া থানায় এসেছে। তবে তার বিরুদ্ধে কোটালীপাড়া থানায় কোন মামলা নেই।”
স্থানীয় হিরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না বলছেন, “রবিউল ওরফে সোহাগের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করেছে তার স্ত্রীরা।”
মাজহারুলের হিসেবে, রবিউল ২০টির মতো বিয়ে করেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয়ে তাদের বিয়ে করেন তিনি। পরে তার স্ত্রীরা মামলা করেছেন, এ নিয়ে এলাকায় বিচার সালিশও হয়েছে একাধিকবার।