সাত বাংলাদেশি পেলেন আসামের বলিপাড়া ফাউন্ডেশনের পুরস্কার

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আরও ৫০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং প্রকৃতি ও মানুষের ভারসাম্য বজায় রাখায় অবদানের জন্য প্রশংসা করা হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2022, 06:22 PM
Updated : 11 Dec 2022, 06:22 PM

প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য টেকসই উদ্ভাবনি পদ্ধতির বিকাশে অবদানের জন্য সাত বাংলাদেশিকে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে আসামের পরিবেশবাদী সংস্থা বালিপাড়া ফাউন্ডেশন।

রোববার ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) মিলনায়তনে এক কর্মশালায় তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

বাংলাদেশি পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর চেয়ারম্যান গোলাম মাঈনউদ্দিন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, খাগড়াছড়ির পার্বত্য পিটাছড়া বনাঞ্চল সংরক্ষণে কাজ করা মাহফুজ আহমেদ  রাসেল, প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা দেলওয়ার জাহান, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আরও ৫০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও পরিবেশ সংরক্ষণ এবং প্রকৃতি ও মানুষের ভারসাম্য বজায় রাখতে অবদানের জন্য বিশেষভাবে প্রশংসা করা হয়।

বালিপাড়া ফাউন্ডেশন ২০১৩ সাল থেকে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।

বাংলাদেশের বাইরে ‘ল্যান্ডমার্ক ইকোনমকিস অব বায়োডাইভার্সিটি’ রিপোর্টের লেখক পার্থ দাশগুপ্ত, ইকোনমিক্যাল থিংক ট্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা কমলজিত সিং বাওয়াকেও পুরস্কার দেওয়া হয়।

বলিপাড়া ফাউন্ডেশন আট ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। যেগুলো হলো- রুরাল ফিউচার রিওয়াইল্ডিং, ফুড ফর দ্য ফিউচার, ফরেস্ট গার্ডস অ্যান্ড রেঞ্জার্স, লাইফটাইম সার্ভিস, ন্যাচারনোমিক্স, গ্রিন জার্নালিস্ট, গ্রিন লিডার ও ইয়াং ন্যাচারালিস্ট।

রোববার 'বাস্তুসংস্থানই অর্থনীতি' উপপাদ্যকে সামনে রেখে আইইউবিতে তিন দিনের ‘দশম ইস্টার্ন হিমালয়ান নেচারোনোমিকস’ কর্মশালার শুরু হয়েছে। এটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

আয়োজকদের একজন সৌরভ মালহোত্রা জানান, আইইউবির সেন্টার ফর বে অব বেঙ্গল স্টাডিজ ও বলিপাড়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনের এই কর্মশালায় পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে থাকা দেশগুলোর বাস্তুসংস্থান ও মানুষের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে এই কর্মশালায় আলোচনা হবে। এতে প্রকৃতি সংরক্ষণের মাধ্যমে কীভাবে অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করা যায় তা জোর পাবে।

তিনি বলেন, "এই আলোচনার জন্য বাংলাদেশের চেয়ে ভাল জায়গা আর কী হতে পারে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একই ধারার পরিবেশ ও সংস্কৃতি শেয়ার করে আসছি৷ জীববৈচিত্রের সাথে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। আমরা আশা রাখছি সামনের দুই দিনে আমরা এই ফোরামে অংশ নেওয়া সবার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য জ্ঞান অর্জন করতে পারব৷”

অনুষ্ঠানে এক ভিডিওবার্তায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, "পরিবেশ নষ্ট করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায় নগন্য। অথচ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের ওপর সবচেয়ে বেশি। সমুদ্রের উচ্চতা একটু বাড়া মানেই আমরা প্রভাবিত হওয়া। আমাদের মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, ভূমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে৷

“হিমালয়ের বরফ গলা স্বল্প মেয়াদে বন্যা তৈরি করছে, আর দীর্ঘমেয়াদে আমাদের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে নদীর পানিরে লবণাক্ততা বাড়ছে৷ ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিচ্ছে, যা উপকূলীয় এলাকার জনপদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। হিমালয় থেকে নেমে আসা পানিতে আমাদের মিঠা পানির নদীগুলো ভরে যায়। তাই হিমালয়কে বলা হয় নিরাপদ পানির টাওয়ার। তাই নিজেদের জন্যই হিমালয়ের বাস্তুসংস্থান রক্ষা করতে হবে।"

অনুষ্ঠানে বালিপাড়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা রঞ্জিত বাটঠাকুর, গ্র্যানথাম রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইব ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট অব দ্য লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস' এর চেয়ারম্যান লর্ড নিকোলাস স্ট্যার্ন, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত শ্যাম শরন বক্তব্য দেন।

বলিপাড়া ফাউন্ডেশন ২০০৩ সাল থেকে জীববৈচিত্র সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে কাজ করে আসছে।