“আইইপিএমপি বিগত সরকারের একটি ভুল পরিকল্পনার অংশ, যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আর্থিক সংকটকে উপেক্ষা করেছে।”
Published : 11 Apr 2025, 08:18 PM
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত ঢাকায়ও ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ পালন করেছে দেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা।
এই কর্মসূচি থেকে সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়েছে।
তারা বলছেন, এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ব্যয়বহুল ও দূষিত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আরও বাড়বে; তাই এটি দ্রুত সংশোধন করা দরকার।
শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এ দাবি তুলে ধরেন তারা।
পরে আয়োজক সংগঠন ইয়ুথনেট গ্লোবাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের’ অংশ হিসেবে আয়োজিত এই সমাবেশে দুইশ জনের বেশি তরুণ জলবায়ু কর্মী রঙিন ব্যানার, পোস্টার ও স্লোগানের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরেন।
তারা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য ন্যায়সংগত জ্বালানি রূপান্তরের পথে জাতীয় জ্বালানি মিশ্রণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উচ্চতর অন্তর্ভুক্তি এবং জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করার এখনই উপযুক্ত সময়।
সমাবেশে জলবায়ুকর্মীরা বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে অবশ্যই বহুজাতিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জলবায়ু সম্মেলনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশকে দূষণকারী উন্নত দেশগুলোর সহায়তা দেওয়ার জোর দাবিও জানানো হয় সমাবেশে। বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জলবায়ু ঋণ নিঃশর্ত মওকুফের দাবিও জানিয়েছেন তরুণ জলবায়ু কর্মীরা।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবে একই দিনে দেশের ৫০টি জেলায় একযোগে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় ২০১৮ সাল থেকে ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট’ কর্মসূচি পালন করে আসছেন সারা বিশ্বের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। মূলত এই ‘ধর্মঘটের’ মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেণ তারা।
বৈশ্বিক পর্যায়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সংগঠন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ এ ধর্মঘটের মূল উদ্যোক্তা। ফ্রাইডেস ফর ফিউচার এর সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশে প্রতিবছর জলবায়ু ধর্মঘটের আয়োজন করে আসছে তরুণদের সংগঠন ইয়ুথনেট গ্লোবাল।
তরুণদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “আইইপিএমপি বিগত সরকারের একটি ভুল পরিকল্পনার অংশ, যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আর্থিক সংকটকে উপেক্ষা করেছে। এ পরিকল্পনায় বিদ্যুতের চাহিদা অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষিতভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যার সুযোগ নিয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এখনই সময় আইইপিএমপি পুনঃমূল্যায়ন ও সংশোধনের। আমরা চাই নতুন পরিকল্পনা হবে দেশীয় সমাধানভিত্তিক, দেশীয় অর্থায়নে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে প্রণীত।”
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “আইইপিএমপিতে নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের কোনো সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন নেই। কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কত কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, সেটির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
“একই সঙ্গে রিনিউয়েবল এনার্জি পলিসি ২০২৫-এর সঙ্গে সমন্বয় করে আইইপিএমপিকে সংশোধন করতে হবে।”
সমাবেশে ইয়ুথনেট গ্লোবাল এর নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, “জলবায়ু সংকটকে বিবেচনায় রেখে আমাদের শক্ত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আইইপিএমপিতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সুবিধা নিশ্চিত করার বদলে দরকার একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও স্থানীয় বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানোর পরিকল্পনা। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারই একমাত্র টেকসই পথ।”