শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ঘোষণা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ, যাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
Published : 14 Dec 2014, 12:07 PM
চবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে মৃত্যু তদন্তে কমিটি
হলে ওঠার ২৪ দিনের মধ্যে লাশ হল তাপস
চবি ছাত্রলীগের দ্বন্দ্বে ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর চবি ছাত্রলীগে ‘দ্বন্দ্ব নিরসন’
আ. লীগ ক্ষমতায়, ছাত্রলীগ দুর্বল কেন: ওবায়দুল কাদের
রোববার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে একসঙ্গে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের দুই পক্ষ- ‘সিএফসি’ ও ‘ভিএক্স’ এর সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়ায় বলে শিক্ষার্থীরা জানান।
সংঘর্ষের মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের সামনে গুলিবিদ্ধ হন সংস্কৃত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাপসের মৃত্যু হয়। তিনি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থানার বিষ্ণুপুর এলাকার বাবুল সরকারের ছেলে।
নিহত তাপসকে নিজেদের সমর্থক হিসাবে দাবি করেছেন সিএফসির নেতা অমিত কুমার বসু।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলে তল্লাশি চালিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীসহ মোট ৩০ জনকে আটক করা হয় বলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এএসপি আ ফ ম নিজাম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বুদ্ধিজীবী চত্বরে একসঙ্গে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ছাত্রলীগের বিবাদমান পক্ষদুটি।
ফুল দেওয়া শেষে ‘সিএফসি’র কর্মী-সমর্থকরা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শাহ আমানত এবং অপরপক্ষের ‘ভিএক্স’ সমর্থকরা শাহজালাল হলের দিকে চলে যায়।
এরই মধ্যে শাহ আমানত হলের সামনে ভিএক্সের কয়েকজন সমর্থক সিএফসির এক সমর্থককে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করলে দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এরপর শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং গোলাগুলি।
একাধিক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সংঘর্ষের সময় শাহ জালাল হলের ভেতর থেকে গুলি করা হয়। হলের সামনে কয়েকজনের সঙ্গে দাঁড়ানো তাপসের পিঠে গুলি লাগে। আহত হন আরও পাঁচজন।
সিএফসি পক্ষের নেতা অমিত কুমার বসু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাহ আমানত হলের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয় তাপস। সে আমাদের সক্রিয় কর্মী। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।”
এ বিষয়ে জানতে শাহ জালাল হলের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভিএক্স সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও নেতাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জহিরুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ তাপসকে হাসপাতালে আনার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিরাজ উদ দৌলাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর দুপুরের দিকে শাহজালাল হলে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে আটক করে পুলিশ। তদের সবাই ছাত্রলীগকর্মী বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
হাটহাজারী থানার ওসি মোহাম্মদ ইসমাইল দুপুরে বলেন, “আটকদের থানায় পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাতে এসএসপি নিজাম ৩০ জনকে আটকের তথ্য জানিয়ে বলেন, এদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
গত ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব নিয়ে ‘ক্ষোভ ও বিরক্তি’ প্রকাশ করেন।
এরপর দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দায়িত্বও দেওয়া হয়।
এরপর ১৬ নভেম্বর মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে বৈঠক করে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের’ ঘোষণা দিয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের এই সহযোগী সংগঠনের দুই পক্ষের কর্মীরা।
ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ১০ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১৯ নভেম্বর খুলে দেওয়া হয় শাহ আমানত হল। এরপরই হলটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্রিয় হয় চবি ছাত্রলীগের তিন পক্ষ।
এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করায় ক্যম্পাসে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছিলেন শিক্ষার্থীরা।