প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সমর্থিত শাটল ট্রেনের বিবাদমান দুই পক্ষ আলোচনা শেষে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে’র ব্যাপারে একমত হয়েছে।
Published : 15 Nov 2014, 11:22 PM
শনিবার রাত পৌনে ১০টায় চট্টগ্রাম নগরীর চশমা হিলে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক বিবদমান পক্ষ ‘সিএফসি’ এবং ‘ভিএক্স’ এর প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেন।
ওই আলোচনায় দুই পক্ষের সাতজন করে প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নাসির হায়দার বাবুল এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
গত ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অভ্যন্তরীণ বিরোধে ‘ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত’ শেখ হাসিনা দ্বন্দ্ব নিরসনে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা মহিউদ্দিন ও নাছিরকে দায়িত্ব দেন।
ওইদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ হওয়ার পাশাপশি বিরক্তি প্রকাশ করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন নাছির।
ছাত্রলীগের দ্বন্দ্বে গত তিন বছরে বেশ কয়েকবারই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সফরের দুদিন আগেই আগে শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ওই দুই সংগঠনের পাল্টাপাল্টি অবরোধও চলে। এই দুই পক্ষই মহিউদ্দিনের অনুসারী বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
শনিবার রাত পৌনে ১১টায় আলোচনা শেষে সিএফসি’র পক্ষে অমিতকুমার বসু ও ভিএক্স-এর পক্ষে এস এম আরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণভাবে ‘সহাবস্থানের’ বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন।
তারা জানান, ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছাড়াও সাংগঠনিক নির্দেশ মেনে সংগঠনবিরোধী কোন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও দুই পক্ষ একমত হয়েছে।
এক ঘণ্টার ওই বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে আজম নাছির বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে সমস্যা হওয়ায় একপক্ষ ক্যাম্পাসে থাকতে পারছিলো না। আগামীকাল (রোববার) থেকে দুপক্ষই সহাবস্থান করবে বলে একমত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে, কেউ আইনের ব্যত্যয় ঘটালে তার বিরদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কাউকে চুল পরিমাণ ছাড় না দিতে।”
“আর হলে সিট বরাদ্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কেবল শিক্ষার্থীরা, যাদের ছাত্রত্ব আছে তাদেরকেই আইন অনুযায়ী তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ছাত্রলীগের কমিটিতেও বয়স ও ছাত্রত্ব ছাড়া কাউকে নেয়া হবে না,” বলেন নগর আওয়ামী লীগ নেতা নাসির।
সভাপতি মহিউদ্দিন বলেন, “আমাদের মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। এখন আর কোন সমস্যা নেই। সব এক।”
এর আগেও গত ২৯ অক্টোবর নগরীতে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন মহিউদ্দিন ও নাছির। কিন্তু সে আহ্বানেও সাড়া মেলেনি।
গত প্রায় তিন বছর ধরে বিরোধের জেরে সভাপতিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, কেন্দ্রীয় নেতাকে লাঞ্ছিত করা, নিজেদের মধ্যে গুলি ছোড়াছুড়ি, কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে।
চলতি বছরের ১০ জুন সকালে ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক দুটি গ্রুপের সংঘর্ষে তিন জন আহত হওয়ার পর বিকালে কেন্দ্র থেকে চবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
সবশেষ এ সপ্তাহের রোববার দুইজন শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনার জের ধরে আবারও শাটল ট্রেন-এর বগিভিত্তিক ওই দুইপক্ষ পাল্টাপাল্টি অবরোধ ডেকে আসছিল।