সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অভ্যন্তরীণ বিরোধে ‘ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত’ শেখ হাসিনা দ্বন্দ্ব নিরসনে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
Published : 12 Nov 2014, 08:47 PM
বুধবার চট্টগ্রাম সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠান শেষে মধ্যাহ্নভোজের সময় প্রধানমন্ত্রী দলের নগর সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ হওয়ার পাশাপশি বিরক্তি প্রকাশ করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন নাছির।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ছাত্রলীগের দ্বন্দ্বে গত তিন বছরে বেশ কয়েকবারই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সর্বশেষ দুদিন আগে শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক দুই সংগঠনের পাল্টাপাল্টি অবরোধও চলে। এই দুই পক্ষই মহিউদ্দিনের অনুসারী বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
নাছির বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। মধ্যাহ্নভোজের সময় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ও মহিউদ্দিন ভাইকে ডেকে এসব কেন হচ্ছে, তা দেখতে বলেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিষয়টি সরাসরি আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপের বিষয় না হলেও সহযোগী সংগঠন হিসেবে দায়ও এড়ানো যাচ্ছে না বলে স্বীকার করেন তিনি।
“এটি সরাসরি আমাদের সাথে সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু পরোক্ষভাবে দায়িত্ব আমাদেরও। তাই আমরা আগেও একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। প্রয়োজনে উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলাপ করব।”
সেনানিবাসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী প্রথমে আ জ ম নাছিরের সঙ্গে এবং পরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি দুজনকে একত্রে কাজ করার নির্দেশও দেন।
গত ২৯ অক্টোবর নগরীতে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন মহিউদ্দিন ও নাছির। কিন্তু সে আহ্বানেও সাড়া মেলেনি।
গত প্রায় তিন বছর ধরে বিরোধের জেরে সভাপতিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, কেন্দ্রীয় নেতাকে লাঞ্ছিত করা, নিজেদের মধ্যে গুলি ছোড়াছুড়ি, কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে।
চলতি বছরের ১০ জুন সকালে ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক দুটি গ্রুপের সংঘর্ষে তিন জন আহত হওয়ার পর বিকালে কেন্দ্র থেকে চবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
২০১১ সালের ২৫ জুন ঘোষিত ওই কমিটিতে মামুনুল হককে সভাপতি ও এস এম খালেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ বছর কমিটি বিলুপ্ত করার অনেক আগে থেকেই দৃশ্যপট থেকে ছিটকে যান এ দুই নেতা।
২০১৩ সালের ২৭ অগাস্ট সংবাদ সম্মেলন করে বিলুপ্ত কমিটির কয়েকজন সভাপতি মামুনুলকে ‘শিবির ঘেষা’ আখ্যায়িত করেন। এরপর চবি ছাত্রলীগে শুরু হয় দল-উপদলে বিভক্তি।
চলতি বছরের ৫ এপ্রিল মহিউদ্দিন চৌধুরীর উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে এক পক্ষের হাতে লাঞ্ছিত হন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসির হায়দার চৌধুরী বাবুল।
এরপর এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি ও প্রক্টরের পদত্যাগ চেয়ে ৭ মে থেকে ক্যাম্পাসে অবরোধের ডাক দেয় নাসির হায়দারের অনুসারীরা।
সেসময় ছাত্রলীগের নেতারা এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেন নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে।
এরপর শিবির-ছাত্রলীগের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষের পর বন্ধ থাকা দুটি হল খুলে দেয়ার দাবিতে ‘হলের আবাসিক শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে শিবিরের ডাকা ধর্মঘটের মধ্যে ১০ সেপ্টেম্বর চবি’র শিক্ষক বাসে বোমা হামলা করে শিবির।
এতে দুটি বাসে থাকা শিক্ষকসহ মোট ১৪ জন আহত হন।
এই ঘটনার পরও ঐকবদ্ধ হতে পারেনি ছাত্রলীগ। এরপর চলতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকায় কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ।
সব শেষে গত মাসে নগরীতে বিবদমান দুটি পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিবির তোষণের অভিযোগ তুললে অন্যপক্ষও অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে।