শাটল ট্রেনে চলাচলকারী ছাত্রদের দুটি পক্ষের রেষারেষিতে সোমবার দিনভর অস্থির ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আর এই দুই পক্ষের নেতৃত্বেই রয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
Published : 10 Nov 2014, 06:01 PM
সকালে ‘সিএফসি গ্রুপ’ নামে পরিচিত অংশটি নগরীর ষোলশহরে অবস্থান নিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিলে তার পাল্টায় ‘ভিএক্স গ্রুপ’ নামে পরিচিত অংশটি ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
ফলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনও ছাত্র-শিক্ষকবাহী কোনও বাস কিংবা ট্রেনই ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি বলে পুলিশ জানায়।
তবে দুপুরের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
এর আগে সকাল থেকে ক্যাম্পাসমুখী কোনও বাস কিংবা ট্রেন চলাচল করেনি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর জিয়াউর রহমান সোহেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
রোববার বিকালে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র সাইফুল ইসলাম রাসেল ও মিঠুন চৌধুরীকে ক্যাম্পাসে মারধরের পর শুরু হয় অস্থিরতা। রাসেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সম্পাদক।
ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইংরেজি বিভাগের শাহরিদ শুভ ও চারুকলার ছাত্র জোবায়ের হোসেনিকে সাময়িক বহিষ্কার করে। পাশাপাশি তাদের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়।
রাসেল ও মিঠুন ‘সিএফসি গ্রুপে’ থাকায় এই পক্ষের সমর্থকরা সকালে ষোলশহর স্টেশনে অবস্থান নিয়ে শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি ক্যাম্পাসমুখী শিক্ষকদের বাসগুলোও আটকে দেয় তারা।
চট্টগ্রাম জিআরপি থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে রোববার রাত পৌনে ৯টার ট্রেন ক্যাম্পাসে যেতে দেয়নি ছাত্ররা। সোমবারও তারা বাধা দিচ্ছে।”
এই অবরোধে থাকা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি অমিত কুমার বসু সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাসেলসহ দুজনকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ ছয় দফা দাবিতে আমরা অবরোধ করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে।”
এদিকে ট্রেন আটকে দেওয়ার খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছলে ‘ভিএক্স গ্রুপ’র নেতা-কর্মীরা সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
‘ভিএক্স গ্রুপ’র নেতা রাশেদ হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ (সোমবার) সকালে ও গত রাতে আমাদের পক্ষের চার কর্মীকে সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা মারধর করেছে। হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে আমরা মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেই।”
তবে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর বেলা ১২টায় তারা তালা খুলে নেয় বলে হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে তালা খুলে দেওয়া হয় বলে জানান রাশেদ।
তিনি বলেন, মারধরের শিকার মজিবুল হোসেন পলাশ, অনুপম বড়ুয়া, গোলাম রব্বানি ও সাইমন ইসলাম প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা সকালে বললেও রাতে তা স্থগিতের কথা জানান ‘সিএফসি গ্রুপ’র অমিত বসু।
তিনি বলেন, “নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সব ধরনের কর্মসূচি স্থগিত করছি। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও দোষীদের শাস্তির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছে।”
‘সিএফসি’ ও ‘ভিএক্স’ নামের দুটি পক্ষের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগ নেতারা আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি
শাটল ট্রেনভিত্তিক দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফের নির্দেশে এ কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রক্টর সিরাজ উদ দৌল্লাহ।
দুই সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা খান তৌহিদ ওসমান ও সহকারী প্রক্টর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী।
নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া না হলেও দ্রুত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে, বলেন প্রক্টর সিরাজ উদ দৌল্লাহ।