বিদ্যুৎবিহীন গ্রামাঞ্চলে এখন ভূতুড়ে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
Published : 28 May 2024, 12:35 AM
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে যশোর অঞ্চলে বড় ধরনের প্রভাব না পড়লেও প্রায় সাড়ে ৬ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুতের জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়া, খুঁটি উপড়ে পড়াসহ সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
কৃষি বিভাগ বলছে, ঝড়ের তীব্রতায় উপকূল এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি থাকলেও যশোরে এর তীব্রতা সেই তুলনায় অনেক কম ছিলো। যে কারণে সবজিসহ অন্যান্য ফসলের যে পরিমাণ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিলো তা হয়নি।
যশোর শহর ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার পর সোমবার বিকাল ৩টায় শতভাগ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় বলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান।
দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। তবে বিদ্যুৎবিহীন গ্রামাঞ্চলে এখন ভূতুড়ে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও ওজোপাডিকোর আওতায় প্রায় ১৩ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে ৫ লাখ ৫০ হাজার, ২-এর অধীনে ৬ লাখ ২২ হাজার, ওজোপাডিকো বিক্রয় বিতরণ শাখা-১ এর অধীনে ৫০ হাজার ও বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-২ এর অধীনে ৬০ হাজার গ্রাহক রয়েছে।
এসব গ্রাহক রোববার রাত ১২টার পর থেকে বিদ্যুৎবিহীন ছিলেন। এর মধ্যে সোমবার দুপুর ২টার দিকে ওজোপাডিকোর অধীনে ৭০ শতাংশ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় এবং পরে বিকাল ৩টার মধ্যে শতভাগ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয় বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।
ওজোপাডিকো বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশরী নাসির উদ্দীন বলেন, “ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে যে ক্ষতির আশঙ্কা করছিলাম সেই পরিমাণ ক্ষতি হয়নি। তারপরও কিছু এলাকায় তার ও খুঁটির ক্ষতি হওয়ার কারণে সেগুলো মেরামত করতে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। তবে সেটি এখন পুরোপুরি সচল।”
একই কথা বলেন ওজোপাডিকো বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জি এম মাহমুদ।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. ইছাহাক আলী জানান, ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়া, তার ছিঁড়ে পড়ার কারণে সাড়ে ৫ লাখ গ্রাহক রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
“এর মধ্যে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ গ্রাহকের সংযোগ দেওয়া গেলেও এখনো ২ লাখের মতো গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আশা করা যায়, রাতের মধ্যে শতভাগ সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে।”
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মাদ আব্দুল লতিফ বলেন, অধিকাংশ এলাকায় তারের ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ ২ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা গেলেও এখনও ৪ লাখ গ্রাহকের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ঝড়ের পর থেকেই বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন কাজ করছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সমাধান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ঝড়ে কিছু কিছু এলাকায় বড় গাছের ক্ষতি হয়েছে। তবে এ অঞ্চলের সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে যে গ্রীষ্মকালীন সবজি রয়েছে তা অনেকটা অক্ষত রয়েছে। বরং ভারি বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সবজি ক্ষেতের জন্য উপকার হয়েছে। তবে কিছু এলাকার করল্লা, লাউ, কাকরোলের মাচা বাতাসে পড়ে গেছে বলে তিনি জানান।