চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে সৃষ্ট উত্তেজনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার একটি ছাত্রাবাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে সংগঠনটির তিন পক্ষের তৎপরতায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
Published : 21 Nov 2014, 07:18 PM
এরমধ্যে ওই ছাত্রাবাসে ‘বৈধ’ ছাত্রদের সিট বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থকদের আলটিমেটামে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
তবে ছাত্রাবাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে নিজেদের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ষড়যন্ত্র’ রুখতে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রলীগের তিন পক্ষের নেতারা।
ছাত্র শিবির ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় প্রায় ১০ মাস বন্ধ থাকার পর গত বুধবার সকালে খুলে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হল।
এরপর দুপুরেই হলে অবস্থান নেয় চট্টগ্রাম শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলাচলকারী শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের ‘সিএফসি’ গ্রুপের কিছু নেতাকর্মী। বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপ ‘ভিএক্স’র বাধায় গত প্রায় এক বছর ক্যাম্পাসে সক্রিয় হতে পারেনি ‘সিএফসি’।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হলের ভেতরে অবস্থান নেওয়া ‘সিএফসি’ এবং বাইরে থাকা ‘ভিএক্স’ গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশি তৎপরতার কারণে সংঘর্ষে জড়ানোর আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাতে আরেক দফা দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ করা হয় বলে হাটহাজারী থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অভ্যন্তরীণ বিরোধে ‘ক্ষোভ’ ও ‘বিরক্তি’ প্রকাশ করে দ্বন্দ্ব নিরসনে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দায়িত্ব দেন।
ছাত্রলীগের দ্বন্দ্বে গত তিন বছরে বেশ কয়েকবারই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সফরের দুদিন আগেই শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ওই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবরোধও চলে।
বগিভিত্তিক দুটি পক্ষই নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত।
কিন্তু ছাত্রাবাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপরতার মধ্যে দিয়ে দুইপক্ষের বিপরীত মেরুতে অবস্থানের বিষয়টি আবারো প্রকাশ্যে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘সিএফসি’র একাধিক নেতা জানান, ছাত্রাবাসে তাদের প্রায় একশ নেতাকর্মী অবস্থান করছে। এছাড়া ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজগুলোতেও তাদের অনেকে অবস্থান নিয়েছে। ছাত্রাবাস খোলার পর থেকে তারা হলের ক্যান্টিনেও নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির আরেকটি অংশ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ‘সিক্সটিনাইন’ গ্রুপও ওই ছাত্রাবাসে শক্ত অবস্থান নিতে চায়। এই পক্ষের কিছু নেতাকর্মীও ছাত্রাবাসে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে ছাত্রাবাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে নিজেদের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির’ ষড়যন্ত্র রুখতে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিন পক্ষের নেতারা।
‘সিএফসি’র নেতৃত্বে থাকা বিলুপ্ত কমিটির সহ-সম্পাদক অমিত কুমার বসু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে হল প্রশাসনের বরাদ্দ দেওয়া সিটে প্রকৃত শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। যতো দ্রুত সম্ভব সব সিট যোগ্য শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেওয়া হোক।”
ভিএক্স গ্রুপের নেতা রাশেদ হোছাইন বলেন, দীর্ঘদিন যারা ক্যাম্পাসের বাইরে ছিল তারা ফিরে এসেছে। নবীনদের সঙ্গে পরিচয় না থাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও পরে তা মিটমাট হয়ে গেছে। ছাত্রাবাসে বরাদ্দের বিষয়ে প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত দেবে তা তারা মেনে নেবেন।
‘সিক্সটিনাইন’ গ্রুপের নেতা আলমগীর টিপু বলেন, “শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে রাজি আছি।”
শিবিরের আলটিমেটাম
গত ১২ জানুয়ারি হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্র শিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় শাহ আমানত হল। হল খুলে দেওয়ার পর নতুন বরাদ্দের জন্য ১২৪ জন শিক্ষার্থীর একটি তালিকা প্রকাশ করে প্রশাসন। এই ছাত্রাবাসে মোট ৬৩২টি সিট রয়েছে।
এদিকে ছাত্রাবাসে ‘বৈধ’ ছাত্রদের বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে ‘হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা’ ব্যানারে প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিবির সমর্থিতরা।
এই সময়ের মধ্যে ‘অবৈধ’ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে না দিলে লাগাতার কঠোর কর্মসূচিরও হুমকি দিয়ে বিবৃতি পাঠিয়েছে তারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী এরশাদুল হক রবিন এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দ বিষয়ে শাহ আমানত হলের প্রাধ্যক্ষ মো. আবুল মনছুর বলেন, “প্রথম ধাপে ১২৪ জনের তালিকা দিয়েছি। ২৫ ও ২৬ নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় ধাপে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।
“যারা বৈধভাবে বরাদ্দ পাবে তারাই হলে থাকবে। অন্য কেউ নয়। “