দল ক্ষমতায় থাকলেও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের ছাত্র সংগঠনকে হটিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে না পারায় ছাত্রলীগ নেতাদের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
Published : 12 Dec 2014, 05:52 PM
চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ছাত্র শিবিরের ‘দখলে’ থাকার দিকে ইঙ্গিত করে তা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতৃত্বকে ভাবতে বলেছেন তিনি।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে এক আলোচনা সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকারও সমালোচনা করেন সংগঠনের সাবেক এই সভাপতি।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, “গত ২৮ বছর ধরে চট্টগ্রাম কলেজ, মহসীন কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কাদের দখলে, ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাদের প্রশ্ন করতে চাই। এর মধ্যে ১১ বছর ধরে তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়।”
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের ধ্যান-ধারণা ও আদর্শের অনুসারীরা চট্টগ্রাম কলেজ, মহসীন কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চালায়। একাত্তরের হানাদার বাহিনীর দোসরদের কথাই সেখানে আইন।
“রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ একটি মিছিল পর্যন্ত দিতে পারে না।”
ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দের সুযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষ বিভিন্ন শক্তির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মন্তব্য করে সংগঠনের সাবেক এই সভাপতি।
“পরাজিত শক্তির কাছে আমরা কেন দুর্বল, বর্তমান নেতৃত্বকে তা ভাবতে হবে, কারণ খুঁজে বের করতে হবে। দুর্বলতা চিহ্নিত করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে কাদের বলেন, “দল ক্ষমতায় থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থানে থাকবে। কিন্তু ক্ষমতা হারালে রাতের আঁধারে ক্যাম্পাস ত্যাগ করবে- এটা ঠিক নয়, এমনটি হওয়াও উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ চালু থাকলে এমনটি হতো না, ২২ বছরে অন্তত ৪৪ জন নেতা তৈরি হতো।”
ছাত্র সংসদ চালু থাকলে নেতারা জনপ্রিয়তা অর্জনের স্বার্থে পড়াশোনা ও ভালো কাজে মনোযোগী হবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “আমি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি, আবারও বলছি, অবিলম্বে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দেন। পরিস্থিতি ভালো হবে।”
সকালে টিএসসিতে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে এই আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ।
আব্দুল মান্নান বলেন, ছাত্রলীগের মাত্র পাঁচ ভাগ নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডের কারণে ৯৫ ভাগ নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ড অনেক সময় ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। এ ধরনের ভুল থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে স্বাধীনতার মূলনীতি তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “একটি বুলেট এখনো শেখ হাসিনাকে তাড়া করছে। কারণ ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরেও তিনি বেঁচে আছেন এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তোমাদেরকে বুলেট এবং নেত্রীর মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে হবে।”
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগের জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করে নুজহাত চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সাহস করে সিদ্ধান্ত না নিলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হতো না।”
ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, সারমিন সুলতানা লিলি, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি হান্নান হোসেন তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সাইফ, দপ্তর সম্পাদক মিঠু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক লালনসহ বিভিন্ন হল শাখার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।