“যারা গরিব তারা টাকা দিয়া গেছে, রিকসাওয়ালার পোলায় আইয়া টাকা দিয়া গ্যাছে। যারা ধনী সামর্থ্যবান তারা এসে যুদ্ধ করে।”
Published : 26 Jun 2024, 01:52 AM
বরিশাল ‘জেলা প্রশাসকসহ পাঁচ কর্মকর্তার সম্মানির’ নামে এইচএসসির প্রবেশপত্র বিতরণের সময় ৫০০ টাকা করে দাবি করেছেন এক উপাধ্যক্ষ।
সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হলে উপাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বিকালে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সরকারি পাতারহাট আরসি (রসিক চন্দ্র) মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামের টাকা চাওয়ার।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ছাত্রী উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামের কাছে জানতে চায় এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের জন্য কেন ৫০০ টাকা দিতে হবে।
জবাবে উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম বলেন “টিএনওর সম্মানী পাঠাইতে হবে, ডিসির সম্মানী পাঠাইতে হবে, এডিসির সম্মানী পাঠাইতে হবে। দুইজন ট্যাগ অফিসারকে সম্মানী দিতে হবে।”
উপাধ্যক্ষ আরও বলেন, “তিনি ২১ দিনের ট্রেনিং করে এসেছেন কয়েকদিন আগে। সরকার তাকে দিয়েছে ৫৩ হাজার টাকা আর তার খরচ হয়েছে এক লক্ষ টাকা।”
৫০০ টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র নিতে না পারলে শিক্ষার্থীরা কি করবে এমন প্রশ্নের জবাবে উপাধ্যক্ষকে বলতে শোনা যায়, “এটা তোমার উইশ। তুমি আমার সাথে যুদ্ধ করতে নামো, যুদ্ধ কন্টিনিউ করতে পারো। কোনো সমস্যা নেই। সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার তুমি যুদ্ধ করে যেতে পারো। যুদ্ধ করা তোমার অধিকার।”
ছাত্রীটি সবার এতো টাকা দেওয়ার সামর্থ্য থাকে না বলে জানালে এই শিক্ষক বলেন, “এবিলিটির কথা বইলো না। যারা গরিব তারা টাকা দিয়া গেছে, রিকসাওয়ালার পোলায় আইয়া টাকা দিয়া গ্যাছে। যারা ধনী সামর্থ্যবান তারা এসে যুদ্ধ করে। প্রিন্সিপালকে কিভাবে হেনস্থা করা যায়।”
তিনি ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “যে অ্যান্ড্রয়েড সেটটা তুমি ব্যবহার করো, আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম, তখন ওইটা তো কল্পনাও করতে পারি নাই। তুমি গরিব হইলা কোনখান দিয়া। খালি আমার উপর দায় চাপানো, আমার বেতনের টাকা দিয়া তো তোমাগো জন্য কিছু করতে পারবো না। আমার তো সংসার আছে। ”
তার এমন বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হবার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে কয়েকশত শিক্ষার্থী কলেজের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে।
এক পর্যায়ে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ২০২৩ সালে ২৫ জানুয়ারি অধ্যক্ষ এবিএম মাহবুবুল হক অবসরে যান। এরপর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম দায়িত্ব নিয়েই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের শান্ত করেন। তাদের দাবি ডিসি ও ইউএনওর কাছে লিখিতভাবে দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়।”
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার গাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রবেশপত্র দেওয়ার সময় কোনো অর্থ নেওয়া যাবে না। সেটা যদি পূর্বের বকেয়া হয়, তাও নেওয়া যাবে না। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ। তবুও যদি এরকম কেউ করে থাকে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রবেশপত্র দেওয়ার জন্য টাকা নেয়ার নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। তার এ বক্তব্যের বিষয়টি নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে উপাধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।