টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম।
Published : 21 Jun 2014, 04:54 PM
চট্টগ্রামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
চট্টগ্রামে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ চলছে
শুক্রবার দিনভর বৃষ্টির পর শনিবার সকালেও অব্যাহত বর্ষণে নগরীর অধিকাংশ মূল সড়ক পানির নিচে থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
হাঁটু থেকে কোমর সমান উচ্চতার জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, বহদ্দারহাট মোড়, চকবাজার, বাদুরতলা, বাকলিয়া, কাপাসগোলা, চান্দগাঁও, হালিশহরের একাংশ, আগ্রবাদের কিছু এলাকায় যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
এসব এলাকায় বেশিরভাগ ভবনের নিচতলা, দোকান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে গেছে।
এতে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে দুর্ভোগে পড়েন অফিস ও স্কুল-কলেজগামী সাধারণ মানুষ। ভ্যান ও রিকশায় তাদের চলাচল করতে দেখা গেছে।
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে তো পুরো বর্ষা আমাদের জলাবদ্ধতায় কাটাতে হবে।“
২০১০ সালে জলাবদ্ধতা নিরসনে অঙ্গীকার করে মেয়র নির্বাচিত হন এম মনজুর আলম। এরপর গত চার বছরে এ খাতে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা খরচ হলেও এই মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতেও তলিয়ে গিয়েছিল নগরী।
মনজুর আলম এখন জলাবদ্ধতা ‘জলজটে’ পরিণত হয়েছে বলে দাবি করছেন। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসনে ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়া এবং সরকারি অপ্রতুল বরাদ্দের অজুহাত দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শফিকুল মন্নান সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাই পানি নামতে কিছুটা সময় তো লাগবেই।
“প্রকৃতির সঙ্গে তো আর যুদ্ধ করা যায় না। পরিচ্ছন্ন বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের লোকজন ৪১টি ওয়ার্ডেই পানি সরানোর কাজ করছে।”
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২১৬ দশমিক আট মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত রেকর্ড করা হয় ৩২৬ দশমিক দুই মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। দুই দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৪৩ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বার্তায় বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাংশে নিম্নচাপটি অবস্থান করছে। এটি উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত সক্রিয় আছে। বাংলাদেশ ও উত্তর বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে।
এ কারণে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে মাঝারি ধরণের ভারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
হাটহাজারী সড়কে চলাচল ব্যাহত
অতি বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। শনিবার দুপুর থেকে নগরীর বড় দীঘির পাড় এলাকা থেকে হাটহাজারী সদর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে পানি আটকে রয়েছে।
ওই সড়কে অল্প কিছু বাস ও ট্রাক চলাচল করলেও সড়কে থাকা পানির কারণে তা চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এই সড়কে যান চলাচল কম হওয়ায় চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি যোগাযোগও বিঘ্নিত হচ্ছে।
নগরী থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার একাংশ এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগের মূল সড়ক এটি।
হাটহাজারী থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বড় দীঘির পাড় থেকে হাটহাজারী সদর পর্যন্ত অংশে বিভিন্ন স্থানে পানি উঠেছে।
“তাই অটোরিকশা, প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস চলতে পারছে না। তবে বাস-ট্রাক অল্প সংখ্যায় চলছে।”
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানায়, হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন খাল ও জলাভূমি প্লাবিত হয়ে পানি মূল সড়কে উঠে এসেছে।
উপজেলার মির্জাপুর, ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া ও গুমান মর্দ্দন ইউনিয়নের বেশ কিছু কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারের প্রবল বর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি ঢলের পানি নদী-খাল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান পান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কয়েকটি খালের জমি দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষার পানি নামতে পারছে না। তাই খাল ও জলাভূমি উপচে পানি সড়কে উঠে পড়েছে।
“ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। পানি অপসারণে কয়েকটি স্থানে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন কাজ করছে।”