স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবেশ ও প্রতিবেশ যাতে নষ্ট করা না হয়, সেই পরামর্শ এসেছে এক কর্মশালা থেকে।
Published : 24 Jun 2021, 05:04 PM
ঢাকায় পূর্ত ভবনে বৃহস্পতিবারের এই কর্মশালায় উদ্ভিদবিশারদ, পরিবেশবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট নানা জন অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ছিলেন প্রধান অতিথি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের কাজ চলছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু গাছ কাটা পড়ায় পরিবেশবাদী সংগঠনসহ বিভিন্ন জন সরব হয়। বিষয়টি আদালতে গড়ালে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রাখতে বলে হাই কোর্ট।
গাছ কাটা নিয়ে বাদ-প্রতিবাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কর্মশালায় বসল।
এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমল হোসেন ভূইয়া বলেন, বিশ্বের যে কোনো দেশে স্থাপনা করার সময় সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তা হয় না, যা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, “এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নির্মাণ কাজের নকশা দেখে মনে হচ্ছে, এটি পার্কের মতোই। এটা বিনোদন কেন্দ্র হওয়া উচিৎ নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে পরিবেশ ঠিক রেখে নকশা সংশোধন করা প্রয়োজন। আমরা স্বাধীনতা স্তম্ভ চাই, তবে সেটা পরিবেশ এবং প্রতিবেশ ধ্বংস করে নয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. হারুনুর রশিদ খান বলেন, নকশাটি দেখে তিনিও ‘ব্যথিত’ হয়েছেন। কারণ এতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনাগুলো ফুটে উঠেনি।
খাবার দোকান, টয়লেট মাটির নিচে করার পক্ষে মত দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমুজাদ্দাদী আলফাসানী বলেন, “গাছের জন্য লাইটিংও দূষণের একটি কারণ হয়ে থাকে। সেখানে যেহেতু বিভিন্ন ধরনের গাছপালা আছে, তাই এতে লাইটিং কেমন হবে, সেই বিষয়টিও নজর দিতে হবে।”
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছপালা আরও বাড়াতে হবে এবং বিদেশি প্রজাতির গাছ না লাগিয়ে বিলুপ্তপ্রায় দেশি প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে।
একাত্তর টেলিভিশের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু খাবার দোকান, টয়লেট মাটির নিচে করার পরামর্শ দেন।
তিনি আরও বলেন, “৫০ ফুট ওয়াকওয়ে কেন করা হচ্ছে? এটার কোনো প্রয়োজন আছে কি? এখানে তো কোনো গাড়ি চলবে না।”
গৌরব একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার বিরুদ্ধে আমরাই প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। আমরা এই প্রকল্পের বিরোধী নই। আমরা চাই, সেখানকার পবিরেশ সমুন্নত রেখে যেন কাজগুলো করা হয়।”
একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “প্রকল্প নিয়ে প্রকৃত কোনো তথ্য না থাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। পরিষ্কার করুন কতগুলো গাছ কাটা হবে।”
সবার কথা শুনে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬০ থেকে ৭০টি গাছ কাটতে হয়েছে, আর সর্বোচ্চ ১০টি গাছ কাটতে হতে পারে।
“কিন্তু সেখানে বহু গাছ লাগাবো। সেখানে একশ টন অক্সিজেনের যদি ক্ষতি হয়, আমরা পাঁচশ টনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”
মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করতে প্রকল্পে কিছু ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাণিজ্যিক অর্থে সেখানে কোনো ফুড কিয়স্ক তৈরি হচ্ছে না। এখানে যারা আসবে তারা যেন ৬/৭ ঘণ্টা থাকার পর কিনে কিছু খেতে পারে, তার ব্যবস্থা থাকবে।”
এই অবস্থায় প্রকল্পের নকশায় পরিবর্তন আনা সম্ভবপর নয় বলে জানান গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সামীম আখতার।
তিনি বলেন, “তৃতীয় পর্যায়ে অধিকাংশ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিছু কাজ আছে সেটি করা হচ্ছে। তাই সেখানে বেশিকিছু পরিবর্তন করা এখন সম্ভব নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পের বিষয়ে কনসার্ন। সকলের মতামত নিয়ে এটি করা হবে।”
কর্মশালায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া সভাপতিত্ব করেন।