সোহরাওয়ার্দীতে ‘আপাতত’ গাছ কাটা যাবে না

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রাখতে বলেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2021, 06:18 AM
Updated : 11 May 2021, 09:05 AM

সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে আদালত বলেছে, তিনি যেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়ে দেন।

‘আদালতের রায় উপেক্ষা করে’ উদ্যানে গাছ কাটায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীর আনা ‘আদালত অবমাননার’ অভিযোগের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট এ আদেশ দিয়েছে।

বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক মামনুর রহমান বলেন, “আমাদের আদেশটা হচ্ছে,  আগামী ২০ তারিখ (২০ মে) আসবে (শুনানির জন্য)।  আপনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) মৌখিকভাবে বলে দিয়েন, আপাতত যাতে গাছ না কাটে।”

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এ সময় আদালতকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আমি এখনি কথা বলছি।”

অভিযোগকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিজেও আদালতে আবেদনটির ওপর শুনানিতে ছিলেন।

আদেশের পর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুটো প্রেক্ষাপট- একটি ঐতিহাসিক, অন্যটি আইনগত ও পরিবেশগত।

“ঐহিতাসিক দিক বিবেচনা করে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছেন সে রায়ের নির্দেশনা অনুসারে কী করা হচ্ছে সেটা কখনোই জানানো হয়নি, প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নির্দেশনার বাইরে কাজ হচ্ছে, কাজ করছে। অথচ ওই নির্দেশনাগুলো গত ১১ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। এটা আদালত অবমাননা।”

তিনি বলেন, “দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে- প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যানের শ্রেণি পরিবর্তন করা যায় না। আর গাছ কাটাটাও যে শ্রেণি পরিবর্তন, সেটাও এই ৫ ধারায় বলা আছে।

“সে অনুসারে এখন যে কাজ করছে সরকার, সেটি আইনের পরিপন্থি। তাছাড়া হাই কোর্টের রায়েও এ আইনের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, উদ্যানের শ্রেণি পরিবর্তন করা যায় না। যে কারণে আদালত অবমাননার রুল জারির পাশাপাশি গাছ কাটা ও রেস্তোরাঁ নির্মাণের কাজে স্থিতাবস্থা চেয়েছি।”

শুনানিতে কী হল জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, “আদালত অবমাননার মামলায় যতক্ষণ না রুল জারি হবে, ততক্ষণ অ্যাটর্নি জেনারেল কোনোভাবেই অ্যাপিয়ার (শুনানিতে অংশ নিতে পারেন না) করতে পারেন না। এ বিষয়টা আদালতকে আমি বলেছি।

“কিন্তু আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে শুনেছেন। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চাইলে আদালত আগামী ২০ মে পরবর্তী শুনানির জন্য রেখে বলেছেন, সে পর্যন্ত যাতে গাছ না কাটে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলতে।”    

হাঁটার পথ তৈরির জন্য এখানে কাটা হয়েছে চারটি গাছ। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাটা হয়েছে এই গাছগুলো। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু গাছ ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। কাটার জন্য আরও কিছু গাছ চিহ্নিত করা হয়েছে।

সেখানে ‘রেস্তোরাঁ ও হাঁটার পথ’ নির্মাণের জন্য গাছ কাটা হচ্ছে অভিযোগ করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন প্রতিবাদকারীরা। 

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, ঐতিহাসিক এই উদ্যানে ‘আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র’ গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘কিছু গাছ’ কাটা হয়েছে। গাছ কাটা নিয়ে ‘খণ্ডিত তথ্য’ প্রচার হওয়ায় জনমনে ‘বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে’।

প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম বলেছেন, “যখনই যেই গাছ কাটা পড়বে, সেই গাছের বিপরীতে ১০টা গাছ লাগানো হবে। আর সামগ্রিকভাবে অন্তত এক হাজার গাছ লাগানো আমাদের লক্ষ্য।”

উদ্যানের ‘সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে’ গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার সরকারের তিনটি দপ্তরে উকিল নোটিস পাঠান মনজিল মোরসেদ।

নোটিসে ২০০৯ সালে হাই কোর্টের দেওয়া রায় তুলে ধরে বলা হয়, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিছক একটি এলাকা নয়। এই এলাকাটি ঢাকা শহর পত্তনের সময় থেকে একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।

“এই এলাকার ঐতিহাসিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্য আছে। শুধু তাই নয়, দেশের সকল গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্র এই এলাকা। ফলে সম্পূর্ণ এলাকাটি একটি বিশেষ এলাকা হিসাবে সংরক্ষণের দাবি রাখে।”

দুই দিনের সময় দিয়ে নোটিসে বলা হয়েছিল, ‘রেস্তোরাঁ নির্মাণের জন্য’ গাছ কাটা বন্ধ করা না হলে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে।

সেই নোটিসে সাড়া না পেয়ে গত রোববার তিনি ‘আদালত অবমাননার’ অভিযোগ দায়ের করেন হাই কোর্টে। 

‘আদালতের রায় উপেক্ষা করে’ উদ্যানের গাছ কাটায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামিম আকতার এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমানের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না- সেই প্রশ্নে রুল চাওয়া হয়েছে তার আবেদনে।

রুল চাওয়ার পাশাপাশি উদ্যানের গাছ কাটা ও  রেস্তোরাঁ নির্মাণ কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা চেয়েছেন মনজিল মোরসেদ।

পাশাপাশি কোন প্রকল্পের অধীনে সরকার উদ্যানে কী কী কাজ করছে তার বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন হলফনামা করে আদালতে দাখিলের নির্দেশনা চেয়েছেন তিনি।