জেকেজি হেলথ কেয়ারের দুর্নীতিতে ডা. সাবরিনা আরিফের সম্পৃক্ততা কতটুকু, তা খতিয়ে দেখতে তার সঙ্গে তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
Published : 15 Jul 2020, 01:42 AM
গ্রেপ্তার সাবরিনাকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের হেফাজতে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। কারাগারে থাকা আরিফুলকেও এখন হেফাজতে আনতে চাইছে।
অরিফুল চৌধুরী ও তার ভগ্নিপতি সাঈদ আহমেদকে দ্বিতীয় দফায় সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রতারণার ঘটনায় এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুলকে গত ২৩ জুন গুলশান থেকে গ্রেপ্তারের পর দুদিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছিল থানা পুলিশ।
গত ১২ জুলাই সাবরিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর মামলাটির তদন্তভার যায় গোয়েন্দা পুলিশ বা ডিবির হাতে। ডিবিই সাবরিনাকে রিমান্ডে নিয়েছে।
ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা আলোচিত এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। জেকেজির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানার চেষ্টা করছেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার সাবরিনা (গ্রেপ্তারের পর বরখাস্ত) জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি এখন স্বামীর ওই সংস্থার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকারের পাশাপাশি আরিফুলের সঙ্গে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলার কথাও জানিয়েছেন।
ডিবির এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার রাতে এক দফা এবং মঙ্গলবার দিনভর সাবরিনাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান পদে থাকার কথা অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছিলেন, যারা নমুনা সংগ্রহ করছিল, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
এই বিষয়টি নিশ্চিত হতেই সাবরিনা ও আরিফুলকে একসঙ্গে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জানান ডিবির উপকমিশনার রাসেল।
তিনি বলেন, আরিফুল ও সাঈদকে সাতদিন করে রিমান্ডে চেয়ে তারা আবেদন করলে আদালত বৃহস্পতিবার তার শুনানির দিন ঠিক করেছে।
রাসেল বলেন, “প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান থাকা না থাকার সাথে অপরাধের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে অপরাধের সাথে সাবরিনার সম্পৃক্ততা কতটুকু, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
গ্রেপ্তারের পরপরই ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সাবরিনা যে জেকেজির চেয়ারম্যান ছিলেন, তার কিছু ‘প্রমাণ’ তারা পেয়েছেন।
ডিবির উপকমিশনার রাসেল বলেন, জেকেজির শুধু নমুনা সংগ্রহ করার কথা থাকলেও তারা টাকার বিনিময়ে প্রতিবেদন দিয়েছে, এটা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত।
জেকেজির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিত।
এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজির সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুলকেও গ্রেপ্তার করা হয়। জেকেজির নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল, তাও ২৪ জুন বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ওই ঘটনায় করা মামলায় সাবরিনা, আরিফুল ও সাঈদ ছাড়াও হুমায়ুন কবীর হিরু, তানজীন পাটোয়ারী, জেকেজির কর্মী মামুনুর রশিদ, বিপ্লব গ্রেপ্তার রয়েছেন। সাবরিনা ছাড়া ছয়জনই রয়েছেন কারাগারে।
তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
৩ হাজার পিপিই উদ্ধার
নমুনা সংগ্রহের জন্য যে দুই শতাধিক কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল জেকেজি, তাদের তিতুমীর কলেজে থাকার ব্যবস্থা করেছিল।
২৩ জুন জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিতুমীর কলেজে থাকা সব কর্মীরা কাউতে না বলে চলে যায়।
তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা কার্টনভর্তি পিপিইসহ চৌকি, টেবিল, লেপ তোষক ফেলে রেখে যায়। তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ তা থানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে জানায়।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এসে প্রায ৭২ কার্টন পিপিই নিয়ে যায় বলে অধ্যক্ষ জানান। এই কার্টনগুলোতে ৩ হাজারের মতো পিপিই রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেকেজি কর্মীদের ব্যবহারের জিনিসগুলো নিয়ে যেতেও প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
অধ্যক্ষ বলেন, “এরমধ্যে জেকেজির প্রতিনিধি দাবি করে একজন এসেছিলেন। কিন্তু জেকেজির যে তিনি প্রতিনিধি, এমন প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি। ফলে তাকে দেওয়া হয়নি। এরপর আর কেউ আসেনি।”
তিনি জানান, যে সব চৌকি, টেবিল আনা হয়েছে তা ভাড়া করা। ভাড়া না পাওয়ায় মোহাম্মদপুরের এক ব্যবসায়ী এগুলো নিতে চেয়েছিলেন। তাকে বলা হয়েছে, জেকেজি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসতে।