এ মামলায় গ্রেপ্তার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক সাবরিনা শারমিন হুসাইন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে সোমবার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছিল আদালত।
তেজগাঁও থানার ওসি সালাহ উদ্দীন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার রাতে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তেজগাঁও বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামি সাবরিনাকেও গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। তারাই এখন মামলাটি তদন্ত করছে।”
নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিল ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার- সংক্ষেপে জেকেজি।
কিন্তু জুনের শেষ দিকে অভিযোগ আসে, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল জেকেজি। নমুনা পরীক্ষা না করে রোগীদের ভুয়া সনদও তারা দিচ্ছিল।
এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে ওভাল গ্রুপ ও জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল, তাও ২৪ জুন বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আরিফুল হক চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করে আসা ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনের স্বামী। সে কারণে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নামেই তিনি পরিচিত।
খিলগাঁও গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে বসানো বুথে করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তা পাঠিয়ে দেওয়া হত সরকার নির্ধারিত ল্যাবরেটরিতে।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত রোববার দুপুরে সাবরিনাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জালিয়াতির ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ওই আদেশে বলা হয়, “ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়্যারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া এবং অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এ কারণে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।”
সোমবার তেজগাঁও থানার ওই মামলায় পুলিশ সাবরিনাকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করলে বিচারক তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার রুবাইয়াত জামান জানান, জেকেজির বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতারণার মামলা এবং থানায় হামলা, ভাংচুর পুলিশের কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে।
ওই মামলায় গত ২৩ জুন অরিফুলকে গ্রেপ্তার করার পর জেকেজি কর্মীরা তেজগাঁও থানায় গিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ বাদী আরকেটি মামলা করে এবং তাতে জেকেজির ১৮ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরিফের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে দুইজন ব্যবসায়ী একই থানায় আরও দুটো মামলা করেন। এর একটিতে ১২টি ল্যাপটপ ভাড়া নেওয়ার নামে আত্মসাৎ করা এবং অন্যটিতে দুটি আর্চওয়ে এবং ২০টি ওয়াকিটকি কিনে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
এর মধ্যে আরিফকে তিনটি প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে জানিয়ে রুবাইয়াত জামান বলেন, সাবরিনাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে প্রথম মামলায়। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রতারণার বাকি দুই মামলাতেও তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
আরও পড়ুন