গ্রেপ্তারের ঠিক আগে যা বললেন ডা. সাবরিনা

জেকেজি হেলথ কেয়ারের দুর্নীতির খবর ফাঁসের পর স্বামীর এই সংস্থার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছিলেন ডা. সাবরিনা আরিফ; গ্রেপ্তারের ঠিক আগে তিনি দাবি করলেন, জেকেজির অনিয়মের খবর তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছিলেন।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2020, 01:21 PM
Updated : 26 August 2020, 12:39 PM

রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুলিশ এই চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কার্যালয়ে।

তার ঠিক আগে নিজের কর্মস্থল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় এই চিকিৎসকের।

এদিকে পুলিশ বিকালে জেকেজির প্রতারণার ঘটনায় সাবরিনাকে গ্রেপ্তার দেখায়, যে ঘটনায় তার স্বামী আরিফুল ‍চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।

গ্রেপ্তারের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডা. সাবরিনাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

বরখাস্তের নোটিসে নাম সাবরিনা শারমিন হুসাইন লেখা থাকলেও এই চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ নামে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। কর্মস্থলে তার কক্ষে নাম লেখা ছিল- ডা. সাবরীনা আরিফ। হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ছিলেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারীকালে জেকেজির অফিসে পুলিশের অভিযান এবং এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফকে গ্রেপ্তারের পর থেকে আলোচনায় ছিলেন ডা. সাবরিনা।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার ঘটনায় আলোচিত জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেপ্তার করার কথা জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

রোববার বেলা সোয়া ১২টার দিকে তার কার্যালয়ে গেলে প্রথমে তিনি কিছু বলতে রাজি হচ্ছিলেন না।

“আমি হাসপাতালেই আছি। কোথাও পালিয়ে যাইনি। আপাতত এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। ডিরেক্টর স্যার যদি বলেন তাহলেই আমি আমার বক্তব্য দিব। আমি একাধিকবার বিষয়টি স্পষ্ট করেছি।”

এক পর্যায়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন ডা. সাবরিনা।

 

তিনি বলেন, জেকেজির সঙ্গে যে তিনি নেই, সেটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে তার কাছে প্রমাণও রয়েছে।

“আমি ডিজি স্যারকে জানিয়েছিলাম যে আমি এটার সঙ্গে নেই। আমি স্বেচ্ছাশ্রমটুকুই সেখানে দিতাম। ওইটুকুও দিব না।

“সেখানে অনৈতিক কোনোকিছু হচ্ছে, সেটা আমি জানতাম না। এটার (জেকেজি) কার্যক্রমগুলো সে সিস্টেমিক ওয়েতে যাওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছিল না। এটা আমি সবাইকে জানিয়েছি যে এটার ব্যবস্থাপনায় আমি নেই।”

এই সবাইকে বলতে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

জেকেজি নমুনা পরীক্ষার নামে জালিয়াতি করছিল বলে অভিযোগ এসেছে

নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর নমুনা পরীক্ষার জন্য জেকেজি হেলথ কেয়ারকে দায়িত্ব দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তখন এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে ডা. সাবরিনার কথাই বলা হত।

গত ‍জুন মাসের শুরুতে তিতুমীর কলেজের কর্মচারীদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের মারামারির সময় সাবরিনা জেকেজির হয়ে কথা বলেছিলেন এবং ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেনও।

কিন্তু মাসের শেষ দিকে জেকেজির দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাওয়ার পর তিনি দাবি করেন, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত দুই মাস ধরে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

জেকেজির চেয়ারম্যান পদে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবরিনা রোববার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি কোনোদিন এই প্রতিষ্ঠানের মালিক বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কোনো পদে ছিলেন না।

ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন, যিনি সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নামেই পরিচিত

“সুতরাং এটাকে আমি আমার প্রতিষ্ঠান বলার কোনো অর্থ দেখি না। আমি এই হাসপাতালে চাকরি করলে কি এই হাসপাতালের মালিক হয়ে গেলাম? নিশ্চয়ই তা না।”

তাহলে জেকেজিতে কি আপনি চাকরি করতেন- এ প্রশ্নে তিনি আবার বলেন, “চাকরি করতাম না। চাকরি কেন করব?”

তাহলে আপনাকে জেকেজির চেয়ারম্যান বলা হত কেন- জানতে চাইলে সাবরিনা বলেন, “সবাই কে, আপনি? আপনি চেয়ারম্যান হিসেবে আমার কোনো বক্তব্য শুনেছেন যে আমি নিজেকে চেয়ারম্যান বলে দাবি করেছি?

“আপনারা বলছেন আমি এর মালিক বা চেয়ারম্যান। আমাকে একটা কাগজ দেখান যেখানে লেখা আছে আমি এর মালিক বা চেয়ারম্যান। তারপর এর ব্যাখ্যা চান। আমি তা না, কিন্তু কেন আপনারা তা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে আমি এটার চেয়ারম্যান।”

টিভিতে স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ডা. সাবরিনা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ দেওয়া হয়েছে।

টিভি অনুষ্ঠানেও দেখা যেত সাবরিনা আরিফকে

গত ৮ জুন স্বামী আরিফুলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে সাবরিনা তেজগাঁও থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।

রোববার ডা. সাবরিনা বলেন, জেকেজির চেয়ারম্যান আরিফুল চৌধুরীকে তিনি ডিভোর্স দিয়েছেন। সব প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও দুই মাস লাগবে।

হাসপাতালে তার কার্যালয়ের নামফলকে তার নামের সঙ্গে আরিফ শব্দটি থাকার বিষয়টি দেখালে তিনি বলেন, নামফলকটিও তিনি সরিয়ে ফেলবেন।

নিজের অফিসে ডা. সাবরিনা আরিফের নামফলক

ডা. সাবরিনার সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে আসার সময় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে পুলিশের একটি পিকআপ আসে। একজন উপ-পরিদর্শকের সঙ্গে দুই-তিনজন পুলিশ সদস্যও ছিল। এরপর সাবরিনাকে নিয়ে যায় পুলিশ।

সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে অর্থের বিনিময়ে তা করানো, নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২৩ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুলকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা সংগ্রহের অনুমোদনও বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।