বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের নিবন্ধনের পর এক বছর না হলে যানবাহনের রাইড শেয়ারিং সেবায় যুক্ত হতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না বাংলাদেশে এই সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
Published : 06 Jan 2019, 01:02 AM
অনেকটা বাছ-বিচার ছাড়াই যানবাহনকে মোবাইল অ্যাপে চলাচলের নিবন্ধন দিচ্ছে তারা।
এই নিয়মের সবচেয়ে বেশি লংঘন ঘটছে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিআরটিএর নিবন্ধন নম্বর পাওয়ার পরদিনই রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হচ্ছে অনেক মোটরসাইকেল। এভাবে অনেক প্রাইভেট কারও রাইড শেয়ারিংয়ে চলাচল করছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
এ বিষয়ে চালকদের সঙ্গে কথা বললে অধিকাংশের ভাষ্য, নীতিমালার এ বিষয়টি তারা জানেন না। অ্যাপে নিবন্ধনের সময় রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
রাইড শেয়ারিং সেবা ঢাকায় জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ২০১৭ সালে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করে সরকার। শর্ত ভঙ্গের জন্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধসহ দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।
নীতিমালার ১০ ধারায় বলা হয়েছে, “ব্যক্তিগত মোটরযানে রেজিস্ট্রেশন গ্রহণের পর কমপক্ষে এক বছর অতিক্রান্ত না হলে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় সেবা দিতে পারবে না।”
অর্থাৎ মোটরসাইকেল বা গাড়ি যেটাই হোক না কেন, তা নিবন্ধনের পর এক বছর পার হতে হবে এই সেবায় যুক্ত হওয়ার জন্য।
ওই নীতিমালার ‘ক’ অনুচ্ছেদের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, রাইড শেয়ারিংয়ের আওতায় ব্যক্তিগত যানবাহন হতে হবে।
কিস্তিতে কেনা মোটরসাইকেলের মালিক ওই প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক। কিস্তির টাকা পরিশোধের পর ক্রেতা এর মালিক হবেন। সেক্ষেত্রে অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মোটরসাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ারিং সেবা দেওয়া নীতিমালার লংঘন।
হেমায়েত খান নামে একজন দুই মাস আগে একটি মোটরসাইকেল কিনে রাইড শেয়ারিং সেবা দেওয়া শুরু করেছেন। আয়-রোজগার ভালোই হয়।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বাইক কিনছি দুই মাস হয়। এক সপ্তাহ পরই রাইড শেয়ারিং করা শুরু করছি। আমি যখন অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করলাম তখন তো বাইকের বয়স দেখে নাই। শুধু যে বাইক চালাবে তার নামে কাগজপত্র থাকতে হবে, ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকতে হবে আর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেই হয়।”
মোশাররফ হোসেন নামে আরেকজন মোটরসাইকেল চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ২১ অক্টোবর মোটরবাইকের রেজিস্ট্রেশন করেছেন তিনি। এখন পাঠাওয়ের অ্যাপে রাইড শেয়ার দিচ্ছেন।
“কোম্পানি নতুন গাড়ি চায়। এছাড়া যাত্রীরাও নতুন বাইকে চড়তে পছন্দ করে। এজন্য আমি আগের বাইকটা বিক্রি করে দিয়ে নতুন এই বাইক কিনেছি।”
মাহমুদুল হাসান নামে আরেকজন মোটরসাইকেল চালক বলেন, “আমি নীতিমালার বিষয়টি জানি না। এমন থাকলে তো পাঠাও, উবার তারা বলত। তাদের অ্যাপেই তো আমি বাইক চালাই।”
২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর নিলয় মোটরসের সঙ্গে এবং গত বছর ২৬ অক্টোবর রানার অটোমোবাইলসের সঙ্গে চুক্তি করে পাঠাও। এছাড়া গত ৩ নভেম্বর বাইকারদের কিস্তিতে বাইক কিনতে সহায়তা করতে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে প্রতিষ্ঠানটি।
এসব চুক্তির আওতায় এসব প্রতিষ্ঠান পাঠাও রাইডারদের কিস্তিতে মোটরসাইকেল দেবে।
নিলয় মোটরসের বিক্রয় বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরইমধ্যে নিটল মোটরস থেকে মোটরসাইকেল কিনে তা দিয়ে রাইড শেয়ারিং সেবা দিচ্ছেন চালকরা।
এ ক্ষেত্রে চালকদের কাছ থেকে ‘বেশ ভালো’ সাড়া পাওয়া গেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিস্তিতে কেনা মোটরসাইকেলের মালিকানা কোম্পানির নামে থাকে। কিস্তির টাকা শোধ করার পর সেটি ক্রেতার নামে হস্তান্তর করা হয়।”
“এটা স্পষ্ট করেই লেখা আছে, রেজিস্ট্রেশনের এক বছর পর রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনলিস্টেড হতে পারবে। যেটার রেজিস্ট্রেশন আজ, সেটা কালই সেখানে দিতে পারবে না। এখন শাস্তির বিষয় যদি বলেন, তাহলে বলতে হয়, তারা আমাদের কাছে আবেদন করেছে, কিন্তু আমরা তাদের (কোম্পানিগুলোকে) রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছি না কেন? এ রকমই নানা কিছুর গরমিল আছে।”
নীতিমালা লংঘনের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে সরাসরি কোনো জবাব দেয়নি রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবার।
এক লিখিত বার্তায় উবার বলেছে, তারা যাত্রীদের সুবিধাজনক সাশ্রয়ী সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে।
“রাইডার ও ইউজারদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। এজন্য সর্বোচ্চ দক্ষ অংশীদার চালক নির্বাচনে আমরা কঠোর প্রক্রিয়া মেনে চলি।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও ‘পাঠাও’-এর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি জানতে সহজ ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা এম কাদিরকেও কয়েকবার ফোন করলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রশ্নের জবাবে ওভাই-এর চিফ অপারেটিং অফিসার কাজী ওমর ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা সরকারের প্রচলিত নিয়ম ও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করতে আগ্রহী।
“সেই লক্ষ্যে রাইড শেয়ারিং নীতিমালা অনুযায়ী এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট পেতে এবং গ্রাহকদের সহজলভ্য ও সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের প্রয়াসে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করছে ওভাই।”
তবে সদ্য নিবন্ধিত যানবাহন ওভাইয়ের অ্যাপে চলাচল করছে কি না, সে প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।
ওমর ফেরদৌস বলেন, চালকদের আগ্রহী করতে ওভাইয়ের পক্ষ থেকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার কোনো অফার দেওয়া হয়নি।