অতিরিক্ত ভাড়া দাবি, অ্যাপ নির্দেশিত সোজা পথে না গিয়ে ঘুরপথে গন্তব্যে যাওয়া, যাত্রা শুরুর আগেই রাইড চালু করা এবং কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে অস্বীকৃতিসহ অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ করেছেন সেবাগ্রহীতারা।
অনভিজ্ঞ চালকের কারণে দুর্ঘটনায় পড়ার অভিযোগও করেছেন অনেকে।
ঢাকায় কার্যক্রম চালানো অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা ‘শেয়ার আ মোটরসাইকেল’ বা স্যাম, ‘পাঠাও’ এবং ‘উবার’ ব্যবহারকারীদের ফেইসবুক গ্রুপ পর্যালোচনার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মুহাম্মদ আসিফ ইমরান নামে পাঠাওয়ের একজন সেবাগ্রহীতার অভিযোগ, অনেক মাদকাসক্ত চালক এসব সেবায় ঢুকে পড়েছে।
নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি লেখেন, “রাইডার রাইড শেষে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে বলে- ‘অ্যাপে ভুল রিডিং শো করে’; কিন্তু আসলে আমি যেখানে গিয়েছি, সবসময় একই দূরত্ব শো করে এবং প্রায় একই টাকা দেখায়। সে নামার পর নানা টালবাহানা শুরু করে এবং (অতিরিক্ত টাকা) দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর বিশ্রী ভাষা প্রয়োগ করে।”
মিরপুরের কাজীপাড়া যেতে মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় সোনালী ব্যাংকের সামনে থেকে পাঠাওয়ের রাইডে উঠেন চন্দন কুমার।
তার অভিযোগ, যানজটের অজুহাত দেখিয়ে চালক তাকে শান্তিনগর-মালিবাগ-মধুবাগ ও হাতিরঝিল হয়ে তেজগাঁও-মহাখালী ঘুরে কাজীপাড়া নিয়ে যায়।
অনেক বাকবিতণ্ডার পর আশপাশের লোকজন তাকিয়ে আছে দেখে অনেকটা মানসম্মানের ভয় আর বাসায় অতিথি থাকায় বাইকারকে ৩০০ টাকাই দিতে বাধ্য হন জানিয়ে চন্দন বলেন, “পাঠাওয়ে অভিযোগ করেছি। দেখি তারা কি করে।”
উবারের একজন চালকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন মুহাম্মাদ আবদুর রহমান নামে একজন।
নাজনিন শারমিন সোমা নামে আরেকজনের মন্তব্য, “সিএনজি ড্রাইভাররা যখন অতিরিক্ত ভাড়া নিত, তখন উবার খুব ভালো ছিল। এখন উবার-পাঠাওয়ের ভয়ে সিএনজি চালকরা ভাড়া যখন কমাইলো, এখন উবার অতিরিক্ত ভাড়া নেয়। উবার আমাদের পেয়ে বসেছে। সবসময় অতিরিক্ত সুবিধা খোঁজে খালি।”
কাজী হোসনে মোবারক নামে একজন অভিযোগ করেন, ১০ ডিসেম্বর বনানী থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যেতে উবারে অনুরোধ পাঠান। কিন্তু চালক নতুন বাজার থেকে বনানী আসতে অস্বীকৃতি জানান। চালক দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ তার।
উবারের ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ জানালেন পারভেজ আহমেদ।
“একমাত্র বাংলাদেশেই লুটতরাজের ভালো সুযোগ আছে। উবারের রাইড চার্জ কি গ্রহণযোগ্য? মোটেও না। ৬-৭ কিলোমিটার পথ যেতে ভাড়া হয় ৫০০ টাকা, ডিসকাউন্ট বাদ দিলে হয় প্রায় ৪০০ টাকা। এটা রেগুলার যাত্রীদের পক্ষে মোটেও সম্ভব না।”
“সাধারণত গুলশান-১ থেকে মিরপুর পর্যন্ত সন্ধ্যায় ভাড়া আসে ১৫০-১৬০ টাকা। এরপর পাঠাও আনলো হট জোন সিস্টেম, আজ দেখলাম ১৯৭ টাকা। ডিসকাউন্ট দিয়ে ১৬০ টাকা। হ্যাঁ, পাঠাও একটা অসাধারণ সুবিধা এনে দিয়েছে। তার মানে কি এই যে এখন মানুষের পকেট কাটা শুরু করবে। এইসব সার্ভিসের নামে ফাইজলামি বন্ধ করে মিয়ারা।”
অপ্রশিক্ষিত চালকের কারণে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন বলে অভিযোগ আরেকজনের। তিনি বলেন, চালক ঠিকমতো মোটরসাইকেল চালাতে পারছিল না। তারপরও অতিরিক্ত গতি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়।
পাঠাওয়ে অভিযোগ জানানোর পর ফোন দিয়ে সব শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০০ টাকা প্রোমো দিল। কিন্তু কথা হল, তারা কিভাবে এসব বাইক নিবন্ধন করে। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে। ১০০ টাকা প্রোমো দিয়ে কি করব?”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে উবার এক চিঠিতে জানায়, ইউজারের অনুরোধ পাওয়ার পর সময়, সম্ভাব্য দূরত্ব, সড়কে যানবাহনের অবস্থাসহ কিছু বিষয় বিবেচনা করে প্রাথমিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তবে রাইড শুরুর পর যাত্রাবিরতি, ঘুরপথে যাওয়া, সড়ক বা সেতুর টোলসহ নানা কারণে তা বাড়তে পারে।
ইউজারের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে অস্বীকৃতি, যাত্রা শুরুর আগেই ট্রিপ চালু করে দেওয়া এবং ইউজারের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ উবারের। উবারের অ্যাপেই এ সুযোগ রাখা আছে বলে জানায় উবার।
শেয়ার অ্যা মোটরসাইকেল বা স্যাম এর প্রতিষ্ঠাতা ইমতিয়াজ কাসেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কিছু অভিযোগ আসলেও সেটা খুব বেশি নয়।
তবে পুরো বিষয়টি সরকারের নিয়ন্ত্রণ করা দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অনেক ইউজার আছেন, যারা সামান্য কিছুতেই অভিযোগ করেন। অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার অনেক সুবিধা আছে। তবে এই সেবার যেহেতু পরিধি বাড়ছে, সে কারণে নানা সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। এ কারণে এই সেবাকে একটি নীতিমালার আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।”
“এইটার একটা মনিটরিং সিস্টেম আমরা রাখব। দিনদিন যেহেতু এটার ব্যবহার বাড়ছে, যেহেতু কমপ্লেইনও আসতে থাকবে, এসব অভিযোগ কাউকে না কাউকে তো নজরে আনতে হবে। সেটার সমাধান করতে হবে।”
রাইড শেয়ারিং নীতিমালাটি মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। সেটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।