নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকায় গণপরিবহন সঙ্কটে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে রাইড শেয়ারিংয়ে চলাচলকারী মোটর সাইকেলের চালকরাও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন।
Published : 03 Aug 2018, 10:44 AM
যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, রাইডাররা নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে অতিরিক্ত ভাড়া যেমন চাচ্ছেন। আবার ‘অফলাইন’ হয়ে চুক্তিতে যাতায়াতে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় করছেন।
বৃহস্পতিবার কুড়িল থেকে উত্তরা এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে; শুক্রবারও ঢাকার সড়কে গণপরিবহন নেই বললেও চলে।
বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িল থেকে পাঠাও অ্যাপসে রাইডের অনুরোধ জানাতে গিয়ে দেখা যায়, মোটর বাইকের সংখ্যা খুবই কম।
কুড়িল থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ পাঠালেও কোনো রাইডারের সাড়া পাওয়া যায়নি।
কুড়িল বিশ্ব রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন রাইডারের কাছে কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, তারা ‘অফ লাইনে’ আছেন, অ্যাপে যাবেন না, চুক্তিতে যাবেন।
অ্যাপে অনুরোধ পাঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর একজন রাইডার যেতে রাজি হন। তবে উত্তরার কথা শুনে আড়াইশো টাকা দাবি করেন। রাজি না হলে ওই রাইডার অনুরোধ বাতিল করে দেন।
অ্যাপে কুড়িল থেকে সোনারগাঁও জনপথ পর্যন্ত মোটর সাইকেলের সম্ভাব্য ভাড়া দেখাচ্ছিল ১৩১ টাকা।
সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের সঙ্গে দরদাম করতে থাকা রাইডারদের একজন জানান, হাউজ বিল্ডিং গেলে কমপক্ষে দুইশো টাকা দিতে হবে।
ভাড়া এত বেশি কেন জানতে চাইলে তার উত্তর, “দেড় লাখ টাকা দিয়া মোটর সাইকেল কিনছি। এই গ্যাঞ্জামের মধ্যে দিয়া যামু। মোটর সাইকেল আগুন পোড়াইয়া দিলে জরিমানা কেডা দিব।”
সারোয়ার আলম নামে এক যাত্রী কুড়িল থেকে টঙ্গী যেতে একজন রাইডারকে অনুরোধ করলে তিনি ৬০০ টাকা দাবি করেন। ওই রাইডার বলেন, “গতকাল আমি টঙ্গীতে ৮০০ টাকায় গেছি। এই অবরোধের মধ্যেও আমরা সার্ভিস দিচ্ছি, এজন্য বেশি ভাড়া নিতেই পারি!”
সারোয়ার বলেন, “আমরা কোন পর্যায়ে আছি দেখেন। এইখানে ভাড়া আসে দেড়শ থেকে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা। কিন্তু সাড়ে ছয়শ টাকা চাইছে। অথচ তারা অ্যাপের মাধ্যমে যাওয়ার কথা।”
খিলক্ষেত, বিমানবন্দরসহ উত্তরার বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে রাইডারকে একই আচরণ দেখা গেছে।
এহতাসুর রহমান বলেন, “অন্য দিন অ্যাপ চালু করে রিকোয়েস্ট দিলেই কিছুক্ষণের মধ্যে একসেপ্ট হয়ে যায়। রাইডার কলও করে। কিন্তু আজ অনেকবার চেষ্টা করেও ঢুকতে পারছি না।”
বৃহস্পতিবার বিকালে আবদুল্লাহপুর থেকে কুড়িল বিশ্ব রোড পর্যন্ত অ্যাপে মোটর সাইকেল রাইডের অনুরোধ করেও একই অবস্থা দেখা গেছে।
মিজানুর রহমান এক রাইডার অনুরোধ গ্রহণ করার পর ফোনে বাড়তি টাকা দাবি করেন। বাড়তি টাকা দিতে অপরাগ হলে তিনি মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।
আবদুল্লাহপুর খন্দকার সিএনজি পাম্পের সামনে থেকে মিরপুর যাওয়ার জন্য অ্যাপে বাইকের অনুরোধ পাঠিয়েছিলেন বায়িং হাউজের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন। না পেয়ে সেখানে অপেক্ষমাণ এক রাইডারকে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
সে রাইডার দ্বিগুণের বেশি ভাড়া চাইলে মামুন ক্ষেপে গিয়ে বলেন, “আগে সিএনজি চালাতেন সেই ভালো ছিল। রাইড শেয়ারিংয়ের বদনাম করতে কেন এসেছেন। আপনাদের আচরণ তো সিএনজি ওয়ালাদের চেয়ে খারাপ হয়ে গেছে।”
অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া, অফলাইন করে রাখার বিষয়ে রাইড শেয়ারিং ইউজারদের ফেসবুক পাতায়ও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
মেহফুজ সরকারজি নামে একজন পাঠাওয়ের ইউজার গ্রুপে অভিযোগ করেন, “পাঠাও অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ার দিয়ে পপুলারিটি পেয়েছে। কিন্তু কিছু রাইডার সেগুলো মিসইউজ করছে। অ্যাপস ইউজ না করে সিএনজির মতো করে লোক ডেকে ডেকে নিচ্ছে। গতকাল মহাখালী থেকে উত্তরা ৪০০ টাকা,গুলশান থেকে মোহাম্মদপুর ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছে।”
ফারহান তানভীর শাওন নামে আরেকজন অভিযোগ করেন, “পাঠাও-উবার চালকরা অ্যাপ অফ করে রেখে যাত্রীদের জিম্মি করেছে। মন ইচ্ছেমতো ভাড়া চাচ্ছে। পুরনো কলুষিত পরিবহন ব্যবস্থা ঠিক করতে আজকের এই আন্দোলন। নতুন পরিবহন ব্যবস্থা কলুষিত হওয়ার আগেই সচেতনতা দরকার।”
এ বিষয়ে কথা বলতে পাঠাওয়ের নির্বাহী কায়সার হাশেমির মোবাইলে কল দিয়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
আরেক রাইড শেয়ারিং ‘ও ভাই’ এর সহকারী ব্যবস্থাপক (ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শাফায়েত রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাইড শেয়ারিং আইনেও এ বিষয়টি নিষেধ করা আছে। আমাদের কোনো রাইডারের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নিই। এ অভিযোগ পেলে ওই রাইডারকে ব্লক করে দেব।”