একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে নতুন বেশ কিছু দল। প্রায় অর্ধশত নতুন দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে তৎপরতা শুরু করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি দল আবেদনপত্র জমাও দিয়েছে।
Published : 26 Dec 2017, 03:51 PM
ভোটকে ঘিরে জেগে ওঠা বাহারি নামের দল যেমন রয়েছে, তেমনি আলোচিত মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, কাজী জাফরের জাপা, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনও নিবন্ধন চাইছে।
গত রোববার পর্যন্ত নতুন দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ জালালী পার্টি, সোনার বাংলা উন্নয়ন লীগ, এনডিএম নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নিবন্ধন আবেদন দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত অর্ধশত আবেদনপত্র নিয়েছে বিভিন্ন দল। তারা শর্ত মেনে দলিলাদিসহ জমা দিচ্ছে; ইতোমধ্যে ছয়টি দল জমা দিয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে আগ্রহীদের আবেদন জমা দিতে হবে।”
২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। এতে নিবন্ধিত দলগুলোরই অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
আর ৩১ ডিসেম্বরের (রোববার) মধ্যে নিবন্ধন শর্ত মেনে আবেদন করার সময় রয়েছে।
নিবন্ধনের জন্য আবেদনপত্র নিয়েছে যেসব দল
বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি; বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগার, তৃণমূল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি), ন্যাশনাল ডেমক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বংলাদেশ লেবার পার্টি, শরীয়াহ আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেস, বাংলাদেশ তৃণমূল কংগ্রেস, বাংলাদেশ পিপলস ডেমক্রেটিক পার্টি (বিপিডিপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, ভাসানী ন্যাপ, আম জনতা খেদমত পার্টি, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টি, মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাগো বাহে, বাংলাদেশ সত্য ব্রত আন্দোলন, বংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি, বাংলাদেশ সাধারণ পার্টি, বাংলাদেশ মনবতাবাদী দল, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (বিডিএফ), বাংলাদেশ রেড স্টার পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি, নাগরিক ঐক্য, স্বদেশ পার্টি, বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি, কংগ্রেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, তৃণমূল জনতা পার্টি, ট্রুথ পার্টি, বাংলাদেশ সমাজ উন্নয়ন পার্টি, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ সৎ ও সংগ্রামী ভোটার পার্টি, ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, বাংলঅ শিল্প শ্রমিক এলায়েন্স (বিশা), লিবারেল পার্টি, এম পি পি, বাংলাদেশ নিউ সংসদ লীগ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল (বিডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় ডিজিটাল পার্টি (বিজিডিপি), বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ ইসলামি পার্টি, কৃষক প্রজা পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ও তৃণমূল ন্যাশনাল পার্টি (টিএনপি) ইত্যাদি।
ইসির ওয়েবসাইট থেকে ফরম নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে আবেদনও করা যাবে।
গত রোববার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেতে আবেদন জমা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, যেটির নাম মূলত ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)।
এই দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একসময়ের উপদেষ্টা হাজ্জাজ বিন মুসা (ববি হাজ্জাজ)।
ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার পর এনডিএমের সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সম্পাদক ইয়ামিন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দলের চেয়ারম্যান আসেননি; তবে ভাইস চেয়ারম্যান এনায়েত কবির, মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী মমিনুল আমিনসহ প্রতিনিধিদল আবেদন জমা দিয়েছেন।
“ইসির সব নিবন্ধন শর্ত পূরণ করে আমরা আবেদন জমা দিয়েছি। আশা করি আমাদের দল নিবন্ধন পাবে।”
আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের বড় ছেলে ববি ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে জাপার সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিলেও শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান। গেল বছর নিজেকে চেয়ারম্যান করে এনডিএম নিয়ে হাজির হন তিনি।
পাঁচ বছর আগে ‘নাগরিক ঐক্য’ নামে যে সংগঠন গড়েছিলেন, তাকে গেল জুনে রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ছাত্রলীগ থেকে জাসদ, বাসদ, জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে ফেরা মান্না দল থেকে বাদ পড়েন ২০০৯ সালে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্নাও নতুন দলের নামে নিবন্ধন চাইছেন। দল নিয়ে ফেইসবুকেও তৎপর রয়েছেন তিনি।
নতুন দলের জন্য ‘প্রতীক প্রস্তাব চেয়ে’ সম্প্রতি নিজের ফেইসবুকেও নিখেছেন, “৩১ ডিসেম্বর নাগরিক ঐক্যের নিবন্ধনের জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত পেশ করব।”
ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা জানান, আবেদনপত্র পাওয়ার পর নিবন্ধন বাছাই কমিটি তা পর্যালোচনা করবে। এছাড়া ইসির দায়িত্বশীল দল দলিলাদি সঠিক কিনা তা তদন্ত এবং দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের কমিটি ও অফিসের খোঁজ নেবে।
“সব কিছু যাচাই করে সন্তোষজনক প্রতিবেদন পেলেই তা কমিশন অনুমোদন করবে। ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চের মধ্যে নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন দিয়ে তা গেজেট করা হবে।”
২০০৮ সালে নিবন্ধন চালুর পর এ পর্যন্ত ৪২টি দল নিবন্ধিত হয়; এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।