শ্রীমঙ্গল থানা ওসি জানান, খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
Published : 10 May 2024, 11:26 PM
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ইস্পাহানি মির্জাপুর চা বাগানের কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে কিছু চা শ্রমিকের বিরুদ্ধে। এতে বাগানের ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপক ও কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মী আহত হওয়ার দাবি করা হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকালে চা বাগানটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
বাগানের ব্যবস্থাপক সাইদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের বাগানে কাজ করা পঞ্চায়েত নেতা দেশান্ত কানুর ভাই একটি মামলায় পলাতক রয়েছেন। ভাইয়ের কাজটি বদলি কাউকে দেওয়ার জন্য দেশান্ত কানু তাদের অনুরোধ করেন। কিন্তু তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে এ কাজ দেওয়া যাবে না জানালে দেশান্ত উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
এ ছাড়া পঞ্চায়েত নেতা দেশান্ত প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে শ্রমিকদের উত্তেজিত করে তুলেন বলে সাইদুজ্জামানের অভিযোগ।
তিনি বলেন, “আগে শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা মাসে কাটা হত। এখন বিভিন্ন বাগানে সপ্তাহে কাটা হচ্ছে। এই হিসাবে আমাদের বাগানেও তা সপ্তাহে কাটা শুরু হয়। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ শ্রমিক তা দিয়েও দিয়েছেন।”
এ বিষয়টিকে সামনে এনে সাধারণ শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করে দেশের প্রথম শ্রেণির একটি চা বাগানকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বাগান ব্যবস্থাপকের।
এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কিছু শ্রমিক তাদের গাড়ি ও অফিসে হামলা চালায়। এতে তিনি নিজেও আহত হয়েছেন বলে দাবি সাইদুজ্জানের।
এছাড়াও আহত হয়েছেন বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক জুলকার নাঈম, আব্দুল খালেক ও আরো দুজন নিরাপত্তা কর্মী।
বাগান ব্যবস্থাপক বলেন, “বিষয়টি শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ ও মালিক পক্ষকে জানানো হয়।
“মালিক পক্ষ শ্রমিকদের হামলার সিসিটিভির ফুটেজ দেখে বৃহস্পতিবার বিকালে বাগান বন্ধ ঘোষণা করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সকালে বাগানে কোনো কাজ হয়নি।”
সাইদুজ্জামান বলেন, “শ্রমিকরা আমাদের সন্তানের মত। আমরা তাদের সুখ-দুঃখে সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের দ্বারা আমরা আক্রান্ত হব এটা ভাবতেও পারিনি।”
এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত নেতা দেশান্ত কানুর সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি বিজয় হাজরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছোটখাটো বিষয় নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে ম্যানেজমেন্টের একটি ঝামেলায় শ্রম আইনের ১৩ ধারায় মালিক পক্ষ বাগান লে-আউট করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “একটি কাজের বদলি ও আরো কিছু ছোট বিষয় নিয়ে এ ঝামেলা হয়। বাগান ম্যানেজমেন্ট শ্রমিকদের আটকে রাখে। এ সময় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। তবে এই বিষয়টি সমাধানের জন্য শ্রম অধিদপ্তর ও মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে; কাছাকাছি সময়ে এর একটি সমাধান আসবে।”
চা শ্রমিক ইউনিয়নের আরেক নেতা পরেশ কালিন্দি বলেন, “শ্রমিক, ম্যানেজমেন্ট ও বাগান মালিক প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য বাগানের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা। চা বাগানের কোনো ক্ষতি হলে এটা মালিকের যেমন ক্ষতি, তেমনি শ্রমিকদেরও।একটি ঘটনা ঘটেছে, দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
শ্রীমঙ্গল থানা ওসি বিনয় ভূষণ রায় জানান, খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিবেশ শান্ত রয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম কল্যাণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম প্রিন্স জানান, খবর পেয়ে পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বাগান ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপককে উদ্ধার করা হয়।
প্রিন্স বলেন, “এটি দেশের প্রথম শ্রেণির একটি বড় বাগান।যার আয়তন প্রায় ৪০০ হেক্টর। উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ২ হাজার ৪০০ কেজির ওপরে।
“এরকম একটি বাগান বন্ধ হলে শ্রমিক-মালিক উভয়ের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।চেষ্টা করা হচ্ছে এর দ্রুত সমাধানের।”