পাঁচ বছর আগে ‘নাগরিক ঐক্য’ নামে যে সংগঠন গড়েছিলেন, তাকে এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করলেন মাহুমুদুর রহমান মান্না।
Published : 02 Jun 2017, 07:45 PM
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মান্না।
তিনি বলেন, “নাগরিক ঐক্য শুরুর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল ২০১২ সালে। আমরা শুরু করেছিলাম সামাজিক সংগঠন হিসেবে। গত ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে মানুষের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রত্যাশা মেটাতে আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করার।”
ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক নেতা মান্না আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়েন ২০০৯ সালে। এরপর বিভিন্ন আলোচনা সভা ও টেলিভিশন টক-শোতে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরু থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের টানা অবরোধ-হরতালে সহিংসতায় প্রাণহানির মধ্যে সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানান মান্না। সংলাপ না হলে আবারও ‘ওয়ান ইলেভেনের’ হুমকি দিয়ে আলোচিত হন তিনি।
এরপর বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনের ক্লিপে মান্নাকে ওই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপে উদ্যোগ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায়। এরপর গ্রেপ্তার হয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ২১ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি।
ছাত্রলীগ থেকে জাসদ, বাসদ, জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে ফেরা মান্না ২০০৭ সালে রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের পর সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিতি পান।
সংবাদ সম্মেলনে মান্নাকে প্রশ্ন করা হয়, আরেকটি নতুন দোকান খুললেন কি না?
জবাবে তিনি বলেন, “দেশে দল অনেক আছে। সমালোচনা আছে, হবে। তবে আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আমরা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ করব, আশা আছে প্রমাণ করতে পারব।
“নির্বাচন কমিশনে এই মুহূর্তে নিবন্ধিত দল আছে ৪২টি, নিবন্ধনহীন দল তো অসংখ্য। অগণিত রাজনৈতিক দলের এই দেশে নাগরিক ঐক্য স্রেফ আরেকটা রাজনৈতিক দল হতে যাচ্ছে না।”
‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের’ আলোকে বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে নাগরিক ঐক্য কাজ করবে ঘোষণা করেন এর আহ্বায়ক মান্না।
দেশের বর্তমান অবস্থাকে ‘শ্বাসরুদ্ধকর’ আখ্যায়িত করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে যত দ্রুত সম্ভব একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “সরকার যতই উচ্চস্বরে নিজেদের বৈধ্তা ঘোষণা করুন না কেন, তারা নিজেরাও যেমন জানে, তেমনি জনগণও জানে দেশের ক্ষমতাসীন সরকারটি নৈতিকভাবে অবৈধ। দেশে গণতন্ত্রহীনতার ভয়ঙ্কর ফলাফল হচ্ছে জঙ্গিবাদের প্রসার।
“একটা অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পারে স্বল্প মেয়াদে দেশকে এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে রক্ষা করতে। আমরা বিশ্বাস করি, শুধু একটা সুষ্ঠু নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়, কিন্তু এটাও সত্য সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রের কথা বলাও হাস্যকর। তাই যত দ্রুত সম্ভব এমন একটা নির্বাচনের জোর দাবি জানাচ্ছি আমরা।”
নাগরিক ঐক্যের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বলিত একটি পরিকল্পনাও উপস্থাপন করেন মান্না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে এস এম আকরাম, শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম, হামদে রাব্বী, জিল্লুর রহমান চৌধুরী, সোহরাব হোসেন, জাহিদ হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।