হিন্দিতে সাট্টা শব্দের অর্থ হলো ফাটকা বাজার বা জুয়া বাজার। যদিও ভারতে জুয়া বৈধ না। তারপরও ওই বাজারই নির্ধারণ করে দিল্লির মসনদ। দিন যতই যাচ্ছে এক্সিট পুলের চেয়েও এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।
Published : 03 Jun 2024, 03:35 PM
ভারতের ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটের ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে সাট্টা বাজারগুলো বড় ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে রাজস্থানের ফালোদি জেলার সাট্টা বাজারের সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করার ইতিহাস বেশ পুরনো। হিন্দিতে সাট্টা শব্দের অর্থ হলো ফাটকা বাজার বা জুয়া বাজার। যদিও ভারতে জুয়া বৈধ না। তারপরও ওই বাজারই নির্ধারণ করে দিল্লির মসনদ। দিন যতই যাচ্ছে এক্সিট পুলের চেয়েও এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। যদিও এই বাজারের ভবিষ্যদ্বাণীর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, আছে শুধু পয়সার কারবারি।
সাট্টা খেলার ইতিহাস আজকের নয় বরং ভারতের স্বাধীনতার আগে থেকেই চলে আসছে— যা মূলত এক ধরনের জুয়া। এটা পুরোদস্তুর লটারি খেলার রূপ পায় ১৯৫০ সালের পরপরই। এখন ওই খেলাই অনলাইনে সাট্টা মটকা বা সাট্টা কিং অনলাইন নামে অত্যন্ত জনপ্রিয়। জুয়া ভারতে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তবুও বহু মানুষ এই অনলাইন সাট্টা মটকা গেমের প্রতি আসক্ত, তাদের ভাগ্যের চাকা কীরকম ঘুরছে তা পরখ করতে। প্রসঙ্গত, ভারতে এমন অনেক লটারি ও ঘোড়ার রেসিংয়ের মতো গেমস রয়েছে, যেগুলো দেশে বৈধ।
সাট্টা কিং অনলাইন জুয়ার মতোই একটি খেলা, যা একাধিক মানুষ খেলতে পারেন। বর্তমানে ভারতে যে সাট্টা কিং গেমটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তাতে মূলত পুরস্কার জেতার জন্য নম্বর অনুমান করতে হয়। প্রসঙ্গত, সাট্টা ভারতে বেআইনি হলেও এই সাট্টা মটকা অনলাইন গেমটি ওই দেশে বৈধ। ১৯৫০ সালের দিকে এই গেমটিকেই বলা হত ‘আনকাড়া জুগাড়’। সাট্টা কিং অনলাইন গেমে সাট্টা মটকার স্লিপে অনেকগুলো নম্বর লেখা থাকে। তার মধ্যেই একটিতে লটারি থাকে, যা আসলে একটা অনন্য নম্বর। ০০ থেকে ৯৯-এর মধ্যে বিভিন্ন নম্বর অনুমান করে প্লেয়ারদের বাজি ধরতে হয়। আন্দাজ করা নম্বরটি সঠিক হলে সাট্টা কিং হবেন এবং পুরস্কার হিসেবে অর্থ পেয়ে যাবেন।
তৃতীয় মেয়াদে কি আবার ক্ষমতায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরছে সকলের মনে। বিভিন্ন সংস্থায় সমীক্ষকরা বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলোতে যেমন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছেন, একইভাবে ভোটের ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করছে সাট্টা বাজারগুলোও। ভবিষ্যৎ আঁচ করেই বাজি ধরেন বুকিরা বা জুয়াড়িরা। নির্বাচন হোক কিংবা ক্রিকেট ম্যাচ, তাদের ভবিষ্যদ্বাণী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিলে গিয়েছে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ নিয়ে সাট্টা বাজার বা জুয়া বাজার নিয়ে লাইভমিন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরতে চলছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি সরকার। ফালোদি সাট্টা বাজারের মতে, বিজেপি প্রায় ৩০০ আসন নিয়ে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে। তারা বলেছে, গেরুয়া শিবির প্রায় ২৯০ থেকে ৩০০টি আসন জিততে পারে। এর বিপরীতে, কংগ্রেস মাত্র ৪০ থেকে ৪২টি আসনেই আটকে যাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৫২টি আসন। কাজেই সাট্টা বাজার মনে করছে, গতবারের থেকেও আসন সংখ্যা কমবে কংগ্রেসের। ফালোদি সাট্টা বাজারের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশে ভোট কম পড়া সত্ত্বেও, বিজেপি ৮০টি আসনের মধ্যে ৬২ থেকে ৬৫টিতে জয়লাভ করবে। সব মিলিয়ে এনডিএ ৩২৫ থেকে ৩৩০টি আসন জিততে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফালোদি সাট্টা বাজারের পাশাপাশি ভারতে আরও রয়েছে পালনপুর সাট্টা বাজার, কর্নল সাট্টা বাজার, বোহরি সাট্টা বাজার, বেলগাঁও সাট্টা বাজার, কলকাতা সাট্টা বাজার, বিজয়ওয়াড়া সাট্টা বাজার, ইন্দোর সরাফা, আহমেদাবাদ চোখা বার, সুরাট মাঘোবি ও আরও অনেক বাজার।
বাজিকরদের জন্য এসব বাজার সোনার হরিণ। তারা অর্থ লগ্নি করে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে, এমনকি ভোটের বাক্স থেকে শুরু করে মানুষের পারিবারিক জীবন পর্যন্তও তারা নির্ধারণ করে দিতে পারে।
সাট্টা বাজারের ওপর পরোক্ষভাবে নির্ভর করে ভারতের অধিকাংশ শেয়ার বিনিয়োগকারী। শেয়ার কেনা-বেচা থেকে শুরু করে বাজারকে অস্থির করার চেষ্টায় এসব জুয়াড়িদের আগ্রাসী ভূমিকায় লক্ষ করা যায়। অদ্ভুত, গুজব ও চাঞ্চল্যকর তথ্যের ভিত্তিতে টাকা ওড়ানোর পাশাপাশি পুরো জনমতকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তারা। ভারতের নির্বাচনের সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ছবি শেয়ার করে একাধিক বেটিং মার্কেট থেকে ভোটের পালে হাওয়া লাগানোর চেষ্টা করেছে জুয়াড়িরা। এখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কখনো ঈশ্বর প্রেরিত দূত কিংবা হিন্দুত্বের বড় ত্রাণকর্তা হিসাবে দেখিয়ে ভোটারদের কৌশলে এনডিএ জোট তথা বিজেপির সমর্থক হিসেবে তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
রামমন্দিরকে হাতিয়ার করে এবার প্রচারণা চালিয়েছে বিজেপি। এমনকি বিজিপির শীর্ষ নেতারাও এই রাম মন্দিরকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা দেখানোর চেষ্টা করেছেন বিজেপির একমাত্র কেন্দ্রীয় মুখ নরেন্দ্র মোদী, প্রত্যেক আসনের প্রার্থী স্বয়ং তিনি। মোদীর এই চাতুরি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতা সাট্টা বাজারের বাজিকরদের বেশ প্রভাবিত করেছে। বাজিকররা মোদীর মেকি মহানুভবতা ও হিন্দুত্ব উদারতার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে পুরোদুস্তর ভোট ব্যাংকের রাজনীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাই তো প্রত্যেক সাট্টা বাজারে মোদীর রেট অনেক চড়া, ধরাছোঁয়ার ও নাগালেরও বাইরে।
সাট্টা বাজারের এই পূর্বাভাসগুলো অবশ্য একেবারেই অনুমানভিত্তিক। প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, জাত-ভিত্তিক সমর্থন, নির্বাচনী প্রচারসভায় মানুষের উপস্থিতি, দলের সাংগঠনিক শক্তিসহ একাধিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সাট্টা বাজারে বাজির দর ওঠানামা করে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফার শেষে বিরোধীদের যে উচ্ছ্বাস ও আবেগ দেখা গিয়েছে সাট্টা বাজারের পূর্বাভাস তা বদলে দিচ্ছে। যে সংখ্যার উল্লেখ করছে এ বাজারে তা নাও মিলতে পারে। ৪ জুন, মঙ্গলবার ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। সেদিনই মিলবে চূড়ান্ত উত্তর, কাদের হাতে থাকবে পরবর্তী পাঁচ বছর শাসনের ক্ষমতা? মোদির হ্যাটট্রিক নাকি পতন? আর মাত্র কয়েক ঘন্টায় চূড়ান্ত হবে হিসাব নিকাশ।
আগামী দিনে সাট্টা বাজারগুলো কতটুকু নির্ভুল ও নিখুঁত ফলাফল প্রদান করবে তা নিয়ে মুখিয়ে আছে পুরো বিশ্ব। এসব ফাটকা বাজারের জুয়াড়িরা কি বাচ-বিচার ছাড়াই অর্থ লগ্নি করে নাকি তারা আগাম জেনে যায় কে হবে ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? ফলাফলেই হয়তো এসব প্রশ্নের চূড়ান্ত সমাধান মিলবে।