বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ বিধান সংবিধানের সঙ্গে কেন ‘সাংঘর্ষিক’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 10 Apr 2017, 02:09 PM
ওই ধারা নারী ও শিশু অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি, সনদের সঙ্গে কেন ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ ও ‘পরিপন্থি’ ঘোষণা করা হবে না- রুলে তাও জানতে চেয়েছে আদালত।
একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও জেবিএম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই রুল জারি করে।
আইনসচিব এবং নারী শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ আদালতের নির্দেশনা এবং মা-বাবার সম্মতিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ের সুযোগ রেখে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭’ জাতীয় সংসদে পাস হয়।
ছেলে ও মেয়ের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ২১ ও ১৮ বছর বহাল থাকলেও আইনের ওই বিশেষ বিধানে বলা হয়, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”
ওই আইনের খসড়া নিয়ে আলোচনার সময় থেকেই বিভিন্ন নারী ও শিশু অধিকার সংগঠন এর বিরোধিতা করে বলে আসছিল, এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাল্যবিয়েকে বৈধতা দেওয়া হবে। পাশাপাশি এ আইনে ‘ধর্ষকরা উৎসাহিত হবে’।
‘মৌলবাদীদের খুশি করতে’ সরকার বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে ওই বিশেষ বিধান যুক্ত করছে কি না- সে প্রশ্নও তোলা হয় বিভিন্ন পক্ষ থেকে।
আইন পাসের পর এ নিয়ে প্রতিবাদের মধ্যেই হাই কোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ঢাকায় এক সেমিনারে ওই আইনকে সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক’ বলেন এবং তা সংশোধন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
এরপর বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ও নারীপক্ষ গত ৪ এপ্রিল হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করে।
সোমবার আদালত রুল জারির পর মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাউজিয়া করিম বলেন, “আইনের ওই বিশেষ বিধানটি এ আইনের সঙ্গেই সাংঘর্ষিক। তাছাড়া বাংলাদেশ অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে। অনেকগুলো আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গেও অঙ্গীকারাবদ্ধ। ফলে এসব চুক্তি ও সনদের প্রতি বাংলাদেশের দায়বদ্ধতা আছে।”
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ ধারাটি ১৯৭৯ সালের সিডো সনদ এবং ১৯৮৯ সালের শিশু অধিকার সনদের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক বলেও এই আইনজীবীর ভাষ্য।
তিনি বলেন, “বিশেষ বিধানে আছে বাবা-মা অনুমতি নিয়ে কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু ছেলেমেয়েরা যদি নিজে পছন্দ করে কোনোভাবে বিয়ে করে তাহলে সেটি অপরাধ বলে গণ্য হবে। এটা সাংঘর্ষিক বিষয়। এমনকি বিশেষ ধারাটি আমাদের দণ্ডবিধির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।”
ফাউজিয়া করিম বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার নারী ও বিরোধী দলীয় নেতা নারী হওয়ার পরও এ আইনকে নারী উন্নয়নের পথে কেন বাধা মনে করা হচ্ছে- সেই প্রশ্ন তোলা হয় শুনানিতে।
“আমি বলেছি, হতে পারে তারা নারী, কিন্তু তারা পুরুষতান্ত্রিক একটি ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ আইনটি যখন সংসদে গিয়েছিল তখন এ নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি। অটোমেটিক্যালি পাস হয়ে গেছে। কেউ এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক করেনি। উচিৎ ছিল এ আইনটি নিয়ে শুনানি করা এবং তারপর আইনটি পাস করা।”