মৌলবাদী গোষ্ঠীকে খুশি করতেই বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে কম বয়সে বিয়ে করার সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।
Published : 18 Mar 2017, 05:04 PM
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ বিধান পুনর্বিবেচনার দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির এই সংবাদ সম্মেলনে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের’ প্রোগ্রাম ম্যানেজার দিলীপ সরকার বলেন, “১৯২৯ সালে যে আইনটি হল, ২০১৭ সালে এসে তা আরও পিছিয়ে যাচ্ছে।
“ধর্মান্ধ, মৌলবাদী গোষ্ঠীকে খুশি করার জন্যই এটি করা হচ্ছে।”
এসময় তিনি ‘হেফাজতের ইচ্ছেয়’ পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
৭১টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের জোট সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম সংবাদ সম্মেলনে আইনটি পুর্বিবেচনার দাবি জানান।
আইনটি নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বিধিমালা প্রণয়নের পর উদ্বেগ কমবে বলে আশ্বস্ত করেছিলেন।
ইতোমধ্যে খসড়া বিধিমালা নিয়ে নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনগুলোর সাথে বৈঠকও করেছে মন্ত্রণালয়।
তবে বিধির সমালোচনা করে আয়েশা খানম বলেন, “এই আইনের বিধি প্রণয়নের সময়ে আমরা অনেক অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছি। জাতিসংঘের সংস্থাসমূহও এই বিশেষ বিধানেরর বিষয়ে সম্মত নয়। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি পুনরায় এই বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।”
বিধির সমালোচনা করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, “যেদিন বিধিমালা নিয়ে আমরা বসলাম, সেদিন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা আমাদের বলেছেন এটি ড্রাফট। প্রাথমিকভাবে এটি করা হয়েছে। কিন্তু ড্রাফটে যারা এসব লিখতে পারে, তারা কেমন মানসিকতার?”
বিধির খসড়ায় যেসব বিষয় অন্তভুক্ত করা হয়েছে দেখেছেন তা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন এই আইনজীবী।
তিনি বলেন, “বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে, যে কোনো ছেলে-মেয়েই যদি নিজেরা বিয়ে করে ফেলে, তাদের বাচ্চা হয়ে যায় বা প্রেগনেন্ট হয়, তবে অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে তারা বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করে ফেলতে পারবে।
“আরেকটি বিষয় হচ্ছে যে, শিশু বা অপ্রাপ্তবয়সীদের অভিভাবক না থাকলে, তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া যাবে। অভিভাবক না থাকলে তো তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সরকারের। এটি তো আমাদের সংবিধানের সাথেও সাংঘর্ষিক।”
এর আগে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির একাধিক কর্মসূচিতে আইনটির বিরুদ্ধে ‘লিগ্যাল অ্যাকশানে’ যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের সমালোচনা করে আইনটির মধ্যে থাকা বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
“বাল্যবিবাহ আইনের ১৯ নম্বর ধারায় বিশেষ বিধানে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সর্বোত্তম স্বার্থের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ‘অপ্রাপ্তবয়স্ককের স্বার্থ’ বলতে কী বুঝাবে তা আইনে বলা হয়নি। এটি বাল্য বিবাহ রোধ করার আইন, অথচ এখানে অপ্রাপ্তবয়স্ককের স্বার্থের কথা বলা হচ্ছে।
“আবার আদালতের নির্দেশের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু কোন আদালতে বোঝানো হচ্ছে, তা বলা হয়নি।”
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “১৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, অপরাধের ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর প্রয়োগ করা যাবে। কিন্তু ১৯ নম্বর ধারায় কিন্তু বলা হচ্ছে, এটা অপরাধ হবে না। তখন তাহলে এটি কোন আদালতে যাবে, এটি মোবাইল কোর্টে যাবে কিনা তারও কোনো উল্লেখ নেই। অর্থাৎ ১৭ নম্বর ও ১৯ নম্বর ধারা দুটি সাংঘর্ষিক।”
তিনি বলেন, “বিশেষ বিধানে অভিভাবক বলতে কাকে বুঝানো হচ্ছে, তারও কোনো উল্লেখ নেই। ১৯ নম্বর ধারায় বলা হচ্ছে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত, অর্থাৎ বিধি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আইনের প্রয়োগও হবে না।”