প্রায় এক যুগ আগে এক লেখকের উপর হামলার মধ্য দিয়ে ‘মুক্তচিন্তায়’ আঘাত হানার প্রচেষ্টা শুরু হলেও শেষ হয়নি এ ধরনের বেশিরভাগ ঘটনার বিচার।
Published : 31 Oct 2015, 11:14 PM
ব্লগার হত্যা: এগোচ্ছে না তদন্ত
‘ক্রেতা সেজে হামলা, অস্ত্র একই ধরনের’
মুক্তমনাদের হত্যা: ‘দায়ী সরকারের উদাসীনতা’
ঢাকা মেডিকেলে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতায় প্রকাশক হত্যা: ইমরান
অভিজিতের আরেক প্রকাশক দীপনকে হত্যা
নথি না আসায় ব্লগার অনন্ত হত্যার শুনানি ফের পেছাল
ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ড: পলাতক দুজনের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
মান্নান রাহী এবার অভিজিৎ হত্যা মামলায় রিমান্ডে
অভিজিৎ হত্যা: আনসারুল্লাহর তিন জঙ্গি রিমান্ডে
ব্লগার হত্যা: ‘আনসারুল্লাহ প্রধান’সহ তিনজন গ্রেপ্তার
অনন্ত হত্যা: আবুল খায়ের আরও ৭ দিনের রিমান্ডে
অভিজিত হত্যার আসামি অনন্ত হত্যায়ও
নিলয় হত্যায় গ্রেপ্তার কাউছার-কামাল ফের রিমান্ডে
অনন্ত হত্যা: খায়ের রিমান্ডে, ইয়াহিয়ার জবানবন্দি
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এই মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারদের উপর হামলার শুরু হয়। সেদিন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা চলাকালীন সময়ে ধর্মান্ধদের হামলায় গুরুতর আহত হন লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।
এরপর কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ২০০৪ সালের অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। পরে ১২ অগাস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার ১১ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও এ হত্যাকান্ডের বিচার কাজ শেষ হয়নি, মামলাটি এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
৭ মে পর্যন্ত এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
মামলায় কারাগারে আটক রয়েছেন জেএমবির শুরা সদস্য আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ ও হাফিজ মাহমুদ।
অপর দুই আসামি মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক ও সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিনকে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। তাদের অনুপস্থিতিতেই মামলার কার্যক্রম চলছে।
আরেক আসামি নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু শুরু থেকেই পলাতক আছেন।
আরও দুই জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইদুল ইসলাম হেলাল।
২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর সকালে জেএমবির বোমা হামলায় ঝালকাঠি আদালতের বিচারক সোহেল আহম্মেদ এবং জগন্নাথ পাড়ে নিহত হন।
২০০৬ সালের ২৯ মে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহমদ সাত জঙ্গির ফাঁসির আদেশ দেন।
জেএমবি প্রধান শায়েখ আবদুর রহমান এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ সাত জঙ্গির ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয় ২০০৭ সালের ২১ মার্চ ।
এরপরের হামলাটি আসে মুক্তমনা ব্লগার রাজীব হায়দারের উপরে, যিনি ব্লগ লিখতেন থাবা বাবা নামে।
শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর ১০ দিনের মধ্যে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
দুই বছর পর গত ১৮ মার্চ এ আটজনকে আসামি করে মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের ৫৫ সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। আগামী ৮ নভেম্বর পরবর্তী সাক্ষের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
হত্যা মামলাটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, মাকসুদুল হাসান অনিক, এহসানুর রেজা রুম্মান, নাঈম শিকদার, নাফিস ইমতিয়াজ, সাদমান ইয়াসির মাহমুদ এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী কারাগারে আছেন। অপর আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রাজা পলাতক।
গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা, রানা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সক্রিয় সদস্য ও নেতা।
রাজীবকে হত্যার করার বছরের ৯ এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে দুবৃত্তের হামলায় আহত হন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী আরিফ রায়হান দীপ। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে, তাই শুরু হয়নি বিচার প্রক্রিয়াও।
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বই মেলা থেকে ফেরার পথে হামলায় নিহত হন বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়।
অভিজিৎ হত্যা মামলায় সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদন এখনও আদালতে জমা দিতে পারেনি পুলিশ।
এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তাররা হলেন শফিউর রহমান ফারাবি, বাংলাদেশি বংশদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক তৌহিদুর রহমান, সাবেজ আলী, আমিনুল মল্লিক, জুলহাস বিশ্বাস, মো. জাফরান হাসান এবং মো. আবুল বাশার।
এ ঘটনার পরপর ৩০ মার্চ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বেগুনবাড়িতে প্রকাশ্যে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, ১২ মে সিলেটে সুবিদবাজারে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ এবং ৭ অগাস্ট বাসায় ঢুকে হত্যা করা হয় ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে।
অনন্ত বিজয় দাশ এবং নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় দুই জনই গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলায় গত ১ সেপ্টেম্বর আদালতে পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
মামলার পলাতক আসামি জুনায়েদ তাহের এবং হাসিব আব্দুল্লাহর সম্পত্তি ক্রোক করারও নির্দেশ দেয় আদালত।
মামলার অন্য তিন আসামি আরিফুল ইসলাম, জিকরুল্লাহ এবং সাইফুল ইসলাম কারাগারে আছেন।
এদের মধ্যে আরিফুল ইসলাম ও জিকরুল্লাহকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশে দেয় জনতা।
অনন্ত বিজয় দাস হত্যা মামলায় সিলেটের ফটোসাংবাদিক ইদ্রিস আলী ও মোহাইমিন নোমানকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রয়োজনীয় নথি আদালতে উপস্থাপন করতে না পারায় এখনও মামলার শুনানি শুরু হয়নি।
গত ২৮ অক্টোবর ইদ্রিস আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে গেছে।
আর ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চার জনের মধ্যে গত ১৪ অগাস্ট সাদ আল নাহিন এবং মাসুদ রানাকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দা পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ঘটনায় অপর দুই আসামি কামাল হোসেন সরদার এবং কাউসার হোসেন খানকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।”
এদের মধ্যে সাদ আল নাহিন শ্রমমন্ত্রী মুজিবুল হকের ভাতিজা এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য। তিনি ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন হত্যা চেষ্টা মামলার এজহারভুক্ত আসামি।