নিহত ফয়সল আরেফিন দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক ও লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হকের একমাত্র ছেলে। তার মালিকানাধীন জাগৃতি প্রকাশনী অভিজিতের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামের জনপ্রিয় বইটি প্রকাশ করেছিল।
এর আগে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হত্যায় যে পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিল শনিবারের দুটি হামলার ধরনও একই। লেখক ও অনলাইন কর্মীরা ঘটনার জন্য জঙ্গিদের দায়ী করছে।
শনিবার বিকালে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিজের কার্যালয়ে কুপিয়ে মারা হয় দীপনকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি মো. জসিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিজের অফিস থেকে দীপনকে রক্তাক্ত অবস্থায় বের করা হয়।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দীপন মারা গেছে বলে চিকিৎসকরা জানান।
জাগৃতি প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে অফিসে গিয়ে স্যারকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। তার ঘাড়ে কোপের চিহ্ন ছিল।”
পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। একাধিক ব্যক্তি এ হত্যায় অংশ নিয়েছিল বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।”
দীপন অধ্যাপক ফজলুল হক ও ফরিদা প্রধানের একমাত্র ছেলে। চল্লিশোর্ধ্ব দীপন ছিলেন দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড়। বোন শুচিতা শারমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের শিক্ষক। মা ফরিদা প্রধান রোকেয়া হলের জনপ্রিয় প্রাধ্যক্ষ ছিলেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ত্রাসীদের চাপাতির কোপে নিহত লেখক অভিজিৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে। ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন অভিজিৎ, তাকে হত্যায় জঙ্গিরা জড়িত বলে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে।
পরিবারের সঙ্গে ফয়সল আরেফিন দীপন (ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি)
দীপনের উপর হামলার বিষয়টি সন্ধ্যায় জানাজানি হয় বলে আজিজ সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোরসালিন আহমেদ জানান। এর পরপরই মার্কেটের দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যায়।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক জানান, দুপুর দেড়টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যান দীপন।
“বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ওর মোবাইলে কল করলে কেউ রিসিভ করেনি।”
ঘণ্টাখানেক পরে আজিজ সুপার মার্কেটে এসে অফিসে ছেলেকে ‘গলাকাটা’ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন বলে জানান এই অধ্যাপক।
অভিজিতের বই প্রকাশ করার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
“তার সাথে কারও কোনো বিরোধ ছিল না, শত্রুতা ছিল না। অভিজিতের বই প্রকাশ করেছে এমন আরও তিনজনকে মেরেছে। কমনসেন্স বলে তারাই হামলা করেছে,” বলেন তিনি।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে লালমাটিয়ায় অভিজিতের বইয়ের আরেক প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা।
টুটুলের সঙ্গে থাকা ব্লগার তারেক রহিম ও লেখক রণদীপম বসুকেও কোপানো হয়। টুটুল ও রহিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
অভিজিৎ রায়ের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই বের করেছে শুদ্ধস্বর।
রাজধানীতে এক দিনে দুই প্রকাশনা সংস্থার অফিসে হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা এবং তিনজনকে আহত করার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রাত ৯টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি এখনও পরিষ্কারভাবে কিছু জানতে পারেননি। সংশ্রিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পরে জানাবেন।