প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ‘উন্নয়নের নামে’ প্রায় ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণের ফাঁদে জর্জরিত হয়েছে।
Published : 19 Feb 2025, 11:04 PM
ধনী ও দূষণকারী দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওনা বলে একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল।
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ‘হু ওজ হু’ নামের এই বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ‘উন্নয়নের নামে’ প্রায় ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণের ফাঁদে জর্জরিত হয়েছে। অথচ ১৯৯২ সাল থেকে নিঃসরণ (২০১০ সালের মার্কিন ডলার সমতুল্যে) বিবেচনায় দূষণকারী ও ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে নিম্ন পরিসরের অনুমানেও বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু ক্ষতিপূরণ পাওনা রয়েছে।
আর মধ্য পরিসরের অনুমান অনুযায়ী (১৯৬০ সাল থেকে) ওই অর্থের পরিমাণ ৭ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের কঠিন সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবেদনে জরুরি ভিত্তিতে এ বিদেশি ঋণ প্রত্যাহার এবং ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের’ ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
২০০৪ সালের হিসাব বিবেচনায় প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, এ সময়ে জাতীয় রাজস্বের ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ গেছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পেছনে, যেখানে দেশের স্বাস্থ্যখাতে মাত্র ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং শিক্ষাখাতে মাত্র ১১ দশমিক ৭৩ শতাংশ অর্থ খরচ করা হয়েছে।
একশনএইড-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ধনী দেশ, বেসরকারি ঋণদাতা এবং বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জলবায়ু কর্মসূচিসহ অপরিহার্য সরকারি সেবাসমূহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।
বিপরীতে ধনী দেশগুলো জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশকে ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে বলে তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বের ৫৪টি নিম্ন আয়ের দেশ বিদেশি ঋণের ফাঁদে জর্জরিত ছিল। দেশগুলো জাতীয় উন্নয়ন বিসর্জনের বিনিময়ে ধনী দেশগুলোকে ১৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে।
অন্যদিকে জলবায়ু দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ধনী দেশগুলো কাছে বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো ১০৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওনা বলে সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়, যা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের বিদেশি ঋণ ১ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ৭০ গুণ বেশি।
সমীক্ষায় ৭০টির বেশি দেশের তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রতিবেদনটিতে ধনী দেশগুলোর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এতে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বিদেশি ঋণের ফাঁদের চিত্র ফুটে উঠেছে।”
ঋণ সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ প্রত্যাহার এবং ঔপনিবেসিক ঋণ কাঠামো থেকে মুক্তির আহ্বান জানান ফারাহ্ কবির।
তিনি বলেন, এ বছর ঋণ মওকুফে নতুন জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের জন্য চাপ দিতে হবে বৈশ্বিক দক্ষিণকে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বিশেষ করে দেশের নারী ও মেয়েদের ওপর প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা বারবার দেখেছি কীভাবে নারী ও মেয়েরা জলবায়ু সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। জলবায়ু দূষণকারী ধনী দেশগুলো জলবায়ু ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রশমন ও অভিযোজনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
পুরনো খবর
বিদেশি ঋণ ছাড়িয়েছে ১০৪ বিলিয়ন ডলার
জলবায়ু পরিবর্তন: কার্বন-কারবারিরা শুনতে কি পাও?
কপ২৯: আলোচনায় জলবায়ু তহবিল, দ্বিগুণ সাহায্য চায় ভঙ্গুর দেশগুলো