Published : 01 May 2025, 08:15 PM
পুলিশ বাহিনীর সংস্কার ও ভাবমূর্তি উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা উঠে এসেছে পুলিশ সপ্তাহের এক মতবিনিময় সভায়।
রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বৃহস্পতিবার ওই সভায় সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীন হল তখন কিন্তু রাজনীতিবিদরা আর সব কিছুই পরিবর্তন করলেন, পেনাল কোড সিআরপিসি পরিবর্তন করলেন না, অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট পরিবর্তন করলেন না, যেগুলো যুগের দাবি ছিল।
রাজনৈতিক এই সদিচ্ছা ‘১৯৭১ সালের পরেও দেখা যায়নি’ মন্তব্য করে বর্তমান পুলিশ সংস্কার কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, “সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে যে সমস্ত কথা বলা আছে, সরি টু সে, যে কাজটি করেছেন, সেটা আমি সাত দিনে করে দিতে পারতাম।”
গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল সফর রাজ হোসেন নেতৃত্বাধীন পুলিশ সংস্কার কমিশন।
৩৫২ পৃষ্ঠার ওই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে ১৪টি সুপারিশ করা হয়। পুলিশের নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে পৃথক পুলিশ কমিশন গঠনসহ বলপ্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদে আমূল পরিবর্তন আনার কথা বলা হয় সেখানে।
একই সঙ্গে ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন এবং র্যাবের প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
কমিশনের সুপারিশের সমালোচনা করে নূরুল হুদা বরেন, “আবার কমিশন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলছে। যখন নিরীক্ষার কথা ওঠে তখন ভয় হয়। সবই যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষাই দরকার, তাহলে এই কমিশনের দরকার ছিল কী? কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের কথা কিছুই বলেনি। কিছু আইন ১৯৬১ সালে দরকার ছিল, সেটা এখন প্রয়োজন নেই।”
ফলে এই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন তিনি।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় কথা বলছিলেন নূরুল হুদা। তিনি ২০০০ সালের ৭ জুন থেকে ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক বা আইজিপির দায়িত্ব পালন করেন। পরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করে ২০০৩ সালে অবসরে যান।
সভার মুখ্য আলোচক ছিলেন লেখক ও চিন্তক সলিমুল্লাহ খান। পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতির প্রসঙ্গে নূরুল হুদা বলেন, “এখন অফিসারদের ভালো পরামর্শ দিতে গিয়ে জানা গেল তিন-চার বছর চাকরি করলেই বাড়ি বানিয়ে ফেলতে পারে। এই যে অবস্থা, এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের।
“হিউজ দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি এখনও যে হচ্ছে না এর গ্যারান্টি নাই। আমি খোলাখুলি বলতে চাই না, জানা যায়। এটা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
পুলিশকে জনগণের বিপক্ষে দাঁড় করানো যাবে না মন্তব্য করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, “পৃথিবীতে যত রাষ্ট্র আছে সেখানে পুলিশ আছে। পুলিশ সমাজেরই অংশ। আমাদের দেশে পুলিশের জনপ্রিয়তায় যে ভাটা পড়েছে তা উদারচিত্তে আলোচনা হওয়া উচিত। পুলিশের সঙ্গে জনগণের দূরত্বের গোড়ায় যেতে হবে।”
নিউ এইজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর, ব্যবসায়ী সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য জাহেদ উর রহমানও মতবিনিময় সভায় কথা বলেন।
নূরুল কবীর বলেন, “রাষ্ট্র যখন নিপীড়ক হয়ে ওঠে, তখন পুলিশকে জনতার পুলিশ হতে দেয় না। পুলিশকে জনতার পুলিশ হতে হলে কতগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ন্যায় বা অন্যায় দেখার মত বুদ্ধিমত্তা থাকতে হবে।”
পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি করার পরামর্শ দেন ব্যবসায়ী সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।
সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম বলেন, “আমরা সবাই স্বাধীন হতে চাই। কিন্তু স্বাধীনতা ভালো লাগে না। অনেকে গোলামী করতে চায়। এ দ্বিচারিতার অবসান হওয়া উচিত। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুলিশের ‘অপব্যবহার’ বন্ধ করার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে কাজ করার মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন সাজ্জাদ সিদ্দিকী।
অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, “পুলিশ যদি সত্যের পথে থাকে তাহলে নতুন বাংলাদেশে তাদের আস্থার জায়গা হবে। পুলিশকে অসহায় মানুষের মাঝে দাঁড়াতে হবে।”