Published : 21 Sep 2020, 11:45 PM
করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে যখন পুরো বিশ্ব এলোমেলো, অনেকেই আমরা উচ্ছ্বসিত হচ্ছি এই ভেবে যে – প্রকৃতি যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। আসলেই তো! কালো ধোঁয়ায় ঢাকা আকাশে নীল সাদা মেঘ দেখা দিয়েছে, কংক্রিটের ফুটপাতের পাশে জন্মেছে ঘাস ফুল। আমরা তো মনে করতেই পারি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আর চিন্তা না করলেও হয়। সত্যিই কি ভবিষ্যতে পরিবেশ দূষণ এমন সহনীয় মাত্রায় থাকবে, নাকি করোনা পূর্ব সময়ের চেয়েও কয়েক ধাপ বেশি হয়ে উঠবে পরিবেশ দূষণ সূচকের মান (Environmental Pollution Index – EPI)। এটাও ঠিক যে করোনা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিছুদিনের ভেতরেই শুরু হবে ব্যাপক ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্মযজ্ঞ। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি দক্ষ প্রযুক্তি এবং নবায়ন যোগ্য শক্তি ব্যবহারের আর্থিক হিসেব-নিকাশ তো থাকছেই, একই সাথে আলোচনায় আসবে কার্বন ফুট প্রিন্ট কমানোর বিষয়টিও।
এ বছর বৈশ্বিক জিডিপি কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি থেকে আনুমানিক ৫ শতাংশ কম হবে। সরকারি বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রণোদনা প্যাকেজ থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতিতে আসবে বিরূপ প্রভাব। সব মিলিয়ে নিম্নমুখী ট্যাক্স রেভিনিউ এবং উর্ধ্বমুখী রাষ্ট্রীয় ব্যয় স্বাভাবিকভাবেই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সরকারী প্রকল্পগুলোতে কিছুটা হলেও স্থবিরতা আনবে। মুদ্রা বাজারে তারল্য সংকট এবং বেসরকারী অর্থায়ন কমে যাওয়ার কারণে চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হবে। আর এ অবস্থার সবচেয়ে বড় শিকার হবে আমাদের মত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলো।
তবে এ চিত্র কি টানা চলবে? সম্ভবত না। সাম্প্রতিক করোনা প্রভাব এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বাজারে ইতিহাসের সর্বাধিক দরপতনের মধ্যে বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা দৈনিক আনুমানিক ৩০ মিলিয়ন ব্যারেল কমে গিয়েছিল। এ বছর শেষ নাগাদ এই চাহিদাঘাটতি গিয়ে দাঁড়াবে ৫-১০ মিলিয়ন ব্যারেল। কিন্তু ২০২১-২২ নাগাদ বৈশ্বিক অপরিশোধিত তেলের চাহিদা গিয়ে দাঁড়াবে ২০১৯ এর প্রায় সমান, যা কিনা ২০৩০ এর দিকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ থাকবে। আরও আছে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২০২৯ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৈশ্বিক তাপমাত্রা হ্রাসের লক্ষমাত্রা। বাণিজ্যিক ঋণের প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে সমানভাবে। যদিও ব্যাংক্যাবেলিটি বিচারে প্রকল্প পরিকল্পনা এবং ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং (VGF) এর বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে।
মহামারীর প্রভাব এবং জ্বালানি তেলের কম মূল্যের সুযোগে, তেলের ভর্তুকি কমিয়ে কিছু দেশ এনার্জি ট্রান্জিশন প্রকল্প হাতে নিয়েছে- এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভারত এবং নাইজেরিয়া। পরিবহন খাতে ইলেক্ট্রিক যানবাহনের ব্যবহার থেকে শুরু করে, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে এতে। ফলে জীবাশ্ম থেকে ট্রানজেশনাল এবং সাসটেইনেবল এনার্জি আর্থিক সম্ভাব্যতার প্রতিযোগিতায় আগের চেয়ে ভাল অবস্থানে এসেছে। আমাদের সরকারের ক্যাবিনেট কমিটিও কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই দেশের সর্বপ্রথম ওয়েস্ট টু এনার্জি প্রকল্পটি অনুমোদন করেছেন। ভবিষ্যত জ্বালানি চাহিদার 'শার্প পিক' বিবেচনায়ও ধারণা করা যায় জীবাশ্ম জ্বালানি শিগগিরই কতটা দামী হতে যাচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে সাবসিডি কমলে অকটেন এবং ডিজেলের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারও কমবে, ফলে কমবে কার্বন নি:সরণ। যদিও এ পুরো বিষয়টিতে স্বাভাবিকভাবেই জড়িত থাকবে ভূ এবং জ্বালানি রাজনীতি।
আর এর পাশাপাশি প্যারিস লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নীতি নির্ধারণ এবং পুনর্নিধারণের ব্যাপারগুলোতো থাকছেই।