Published : 03 May 2025, 07:21 PM
ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ ভাঙার প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কবি-সাহিত্যিকদের উদ্যোগে মঞ্চটি পুনরায় নির্মাণ করে দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে।
সোমবার সকালের মধ্যে দাবি মানা না হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কবি-সাহিত্যিকরা।
এদিকে ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গুঁড়িয়ে দেওয়া মঞ্চে শুক্রবার নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন বীক্ষণের ২১৪৭তম আসর অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনের শিরোনাম ছিলো ‘ফুটেছে দুঃখের ফুল’।
একইদিন বিকালে নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন কবি, লেখক ও সাহিত্যিকরা। শনিবার নারায়ণগঞ্জেও হয় প্রতিবাদ।
আগামীকাল রোববার সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের সামনে সুবর্ণগ্রাম সংস্কৃতি অঙ্গনের আয়োজনে মানববন্ধনের কথা জানিয়েছেন কবি ও সংগঠক শাহেদ কায়েস।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার ময়মনসিংহ নগরীর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উদ্যানে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ওই উদ্যানের ভেতরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চটিও গুঁড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মুক্তমঞ্চ ভাঙার পর পাশেই নির্মাণাধীন আরেকটি অসম্পন্ন একতলা স্থাপনা ভাঙতে গেলে কবি ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদ করেন। তখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী হাকিম কে এম রাফসান রাব্বি বৈশাখী মঞ্চের উল্টোদিকে গড়ে ওঠা ‘বিজয়ী পিঠা বাড়ী’ নামে একটি স্থাপনা উচ্ছেদসহ পাঁচটি স্থাপনা উচ্ছেদ করেন।
মুক্তমঞ্চ ভাঙার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কথা, গান, কবিতায় সাহিত্য সংসদের একটি পক্ষ প্রতিবাদ জানান।
বীক্ষণ পাঠচক্রের সাবেক আহ্বায়ক কবি শামীম আশরাফ বলেন, “কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের মুক্তমঞ্চটিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ায় হৃদয়ে বারবার রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
“আমাদের গুঁড়িয়ে দেওয়া মঞ্চ পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হোক। সোমবার সকালের মধ্যে প্রশাসন দুঃখ প্রকাশ করে মঞ্চ পুনর্নির্মাণের ঘোষণা না দিলে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।”
১৯৮০ সালের ২১ মে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ গঠিত হয়। নগরীর জয়নাল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ১৯৯২ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ম শফিউল আলম সাড়ে ছয় শতক জমি সাহিত্য সংসদকে বরাদ্দ দেন লিখিত আকারে। সেই লিখিত চিঠি মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়।
ময়মনসিংহে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ, প্রতিবাদের ডাক
১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসক এ এস এম মতিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাহিত্য সংসদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর থেকেই জায়গাটি সাহিত্য সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল।
১৯৮৩ সাল থেকে সাহিত্য সংসদের নিয়মিত পাঠচক্র বীক্ষণ আসর শুরু হলেও জয়নাল আবেদিন উদ্যানে ১৯৯৩ সাল হতে প্রতি শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে আসরটি হয়ে আসছে। এ ছাড়া সাহিত্য সংসদের আয়োজনে নাট্যপ্রকল্প, আবৃত্তিপ্রকল্প এবং পুরস্কার প্রকল্প পরিচালিত হত।
বীক্ষণ আসরে ইতিহাসবিদ লেখক বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর, কবি আল মাহমুদ, কবি শামসুর রাহমান, কবি আল মুজাহিদী, কবি ও গবেষক আব্দুল মান্নান সৈয়দ, কবি হেলাল হাফিজ, কবি আবু করিম, কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি শহিদ কাদরী, ছড়াকার আবু সালেহ, কবি মাহবুব সাদিক, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজীসহ আরও প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল।
সংস্কৃতিকর্মীরা বলেন, সাহিত্য সংসদটি কবি, লেখক এবং সংস্কৃতি ব্যক্তিদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। নিজেদের বিভেদের কারণে গত কয়েকবছর ধরে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের দুটি কমিটি কাজ করছে। দুটি ভিন্ন স্থানে পরিচালিত হচ্ছে সাপ্তাহিক ‘বীক্ষণ’ আসর।
ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কামাল আল আজাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা আমাদের মুক্তমঞ্চটি গুড়িয়ে দিয়ে রক্তে আগুন ধরিয়েছেন। এটি পুনর্নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এদেশের সাহিত্য সমাজ থামবে না। দেশের বিভিন্ন জায়গার লেখক, কবি, সাহিত্যিক এবং সংস্কৃতিকর্মীরা অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে; তারা একটু ইশারা পেলেই আন্দোলনে দেশ অচল করে দেবে। বিষয়টি আর ঘোলাটে না করে আমাদের মঞ্চটি তৈরি করে দেন।”