হেলিকপ্টারে করে এ দুই সন্দেহভাজনকে ঢাকায় এনে ডিবি বলছে, এ নিয়ে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া ৭ জনই আটক হয়েছে।
Published : 26 Jun 2024, 10:32 PM
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় দুই সন্দেহভাজনকে সীতাকুণ্ডের পাহাড় থেকে গ্রেপ্তার করে হেলিকপ্টারে ঢাকা নিয়ে এসেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দাদের একটি দল।
বুধবার এদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে কলকাতার সেই ফ্লাটে আনার হত্যাকাণ্ডে ‘সরাসরি অংশ নেওয়া’ সাতজনই গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ।
গ্রেপ্তার এ দুইজন নাম বদলে হিন্দু পরিচয় নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পাতাল কালী মন্দিরে ২৩ দিন ধরে অবস্থান করছিলেন বলে জানান তিনি।
এ অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ফয়সাল আলী সাজি ও মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যে হারুন বলেন, এরা দুজন আনার হত্যার অন্যতম আসামি শিমুল ভুঁইয়ার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।
এ অভিযানের পাশাপাশি এদিন এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে ‘গ্যাস বাবু’কে নিয়ে ঝিনাইদহের পুকুরে ফেলে দেওয়া মোবাইল উদ্ধারেও যান ডিবি কর্মকর্তা হারুন। তবে সেখানকার দুই পুকুরে তল্লাশি শেষে কোনো ফোন পাওয়া যায়নি।
এদিকে সীতাকুণ্ডে গ্রেপ্তারদের হেলিকপ্টারে করে এদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে রাজধানীতে আনা হয়েছে। তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি পূর্বাচল হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। আসামিদের গামছা দিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় নামানো হয়।
এরপর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন সাংবাদিকদের বলেন, শিমুল ভুঁইয়ার সঙ্গে মূল ঘাতক হিসেবে ছিল এই ফয়সাল ও মোস্তাফিজুর। হত্যাকাণ্ডের পর ১৯ মে বাংলাদেশে এসে শাহীনের সঙ্গে কথা বলে। তাদের দুজনকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছিলেন।
সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে লুকিয়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা যেহেতু সীতাকুণ্ডের এলাকাগুলো চেনে একসময় ট্রাক চালক হিসেবে কাজ করেছে সে কারণে তারা সেখানে গিয়ে গা ঢাকা দেন। তারা পাতাল কালী মন্দিরে নিজেদের পলাশ রায় ও শিমুল রায় পরিচয় দিয়ে গত ২৩ দিন ধরে অবস্থান করছিলেন।
হারুন বলেন, “কোনো সময় খবর পেয়েছি তারা সুন্দরবনে আছে, কোনো সময় খবর পেয়েছি তারা সাগরে গেছে। আমি বলেছিলাম তারা পাতালে থাকুক, সাগরে থাকুক ধরে আনব। আমরা কথা রেখেছি।
”এরপর আমরা খবর পাই সীতাকুণ্ড পাহাড়ের আশপাশে তারা আছে। আমাদের একটা টিম যায়। পরে আজ হেলিকপ্টারসহ টিম গিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের ধরে নিয়ে আসে।”
তিনি বলেন, “সেখানে তারা নিজেদের পলাশ রায় ও শিমুল রায় নাম বলেছিল। তারা বলেছিল তারা মায়ের (কালীর) ভক্ত, এ কারণে মন্দিরে মন্দিরে থাকে। তারা সেখানেই খেত ও ঘুমাত।”
হারুন অর রশীদ বলেন, কলকাতার সঞ্জীভা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে আনার হত্যার শিমুল ভুঁইয়ার নেতৃত্বে সাতজন অংশ নেন। সবশেষ এই দুইজনসহ পাঁচজন বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হলেন।
তারা হলেন- শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান এবং সর্বশেষ বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল ও মোস্তাফিজুর।
এর বাইরে ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কসাই জিহাদ হাওলাদার এবং নেপালে ধরা পড়েন সিয়াম। সিয়ামকে পরে ভারতের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর বাইরে শিমুল ভুঁইয়ার জবানবন্দির ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু এবং পরে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
তবে এখনও ধরা পড়েনি ডিবির ভাষ্যমতে এই হত্যাকাণ্ডের মূল ’মাস্টারমাইন্ড’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন। এই শাহীন ও আনার পুরনো বন্ধু, শাহীনের ভাই ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র।
শাহীনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বুধবার ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, “আমাদের আরেকজন যে মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীনকে গ্রেপ্তারের জন্য আমরা মার্কিন দূতাবাসে কথা বলেছি। পুলিশ সদরপ্তরের এনসিবির মাধ্যমে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছি। আমরা ভারতে যখন গিয়েছিলাম তখন তাদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। কারণ ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সট্রাডিশন ট্রিটি রয়েছে।”
তিনি বলেন, “কিলিং মিশনে যারা অংশ নিয়েছে শিমুল ভুঁইয়ার নেতৃত্বে এই সাতজনকেই আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তারা সবাই বাংলাদেশেরই মানুষ। এখন যে ব্যক্তিটি মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছে বা যারা টাকা দিয়ে বা বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে তাদের বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
”আমরা যদি আরও কাউকে পাই যারা অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে বা পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছেন বলে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ পাই তাহলে আমরা তাদের গ্রেপ্তার করব।”
ডিবির ওপর কোন চাপ আছে কি না জানতে চাইলে ঢাকায় এ মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবির কর্মকর্তা হারুন বলেন, “আমাদের ওপর কোন চাপ নেই। যদি চাপ থাকত তাহলে একটার পর একটা আসামি ধরতে পারতাম না। চাপ নেই বলে আমাদের ডিবির টিম সারা বাংলাদেশে কাজ করছে।
”যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ, প্রমাণ আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। আমরা অনর্থক কোন ব্যক্তিকে ডাকাডাকি করছি না, অনর্থক কাউকে দোষী করছি না।”
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এই ঘটনায় তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করেন। দুই দেশেই তদন্ত শুরু হয়।
এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আনার হত্যাকাণ্ডের খবরের দিনই তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন শেরেবাংলা নগর থানায় তার বাবাকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে কলকাতায় দায়ের করা হয় হত্যা মামলা।
কলকাতা পুলিশ হত্যা মামলা এবং ঢাকার পুলিশ খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ মামলার তদন্ত করছে। এ নিয়ে ঢাকা ও কলকাতা মিলে এখন পর্যন্ত নয়জন গ্রেপ্তার আছেন। তার মধ্যে দুইজন ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা।
আরও পড়ুন...
আনার হত্যা: বাবুকে ফের রিমান্ডের আবেদনে আদালতের 'না'
আনার হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতা বাবুর 'স্বীকারোক্তিমূলক' জবানবন্দি
আনার হত্যা: বাবুসহ চারজনের মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ
এমপি আনার হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতা বাবুকে ঝিনাইদহ কারাগারে স্থানান্তর
এমপি আনার 'হত্যা': 'চরমপন্থি' শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী আটক
আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুকে গ্রেপ্তারের কারণ জানাল ডিবি
আনার হত্যা: শিমুল ভুঁইয়ার স্বীকারোক্তি
আনার হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতা বাবুর 'স্বীকারোক্তিমূলক' জবানবন্দি
আনার হত্যা: বাবুসহ চারজনের মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ