ডিবির আবেদনে বলা হয়, তারা মোবাইলে থাকা ছবি, ভিডিওসহ অপহরণ ও খুন-সংক্রান্ত কোনো তথ্য মুছে ফেলেছেন কি না, সেটি জানা প্রয়োজন।
Published : 11 Jun 2024, 01:16 PM
ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবুসহ চারজনের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক সোমবার এই আদেশ দেন।
ওই চারজন হলেন- ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাবু, চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এস আই জালাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলার আলামত হিসেবে গ্রেপ্তার চারজনের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। ফোনগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে আবেদন করেছিল। ওই আবেদন সোমবার মঞ্জুর করেছে আদালত।
ডিবির আবেদনে বলা হয়, আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের পর শিমুল, বাবু, তানভীর ও সেলেস্টি নিজেদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন রকম তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। এছাড়া আসামিদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এবং মোবাইলে থাকা ছবি, ভিডিওসহ অপহরণ ও খুন-সংক্রান্ত কোনো তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে কি না, সেটি জানা প্রয়োজন।
এদিকে এমপি আনার হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ তার বাল্যবন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীনের গুলশানের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে দুটি গাড়ি জব্দ করেছে ডিবি পুলিশ। সেগুলোর মধ্যে একট সাদা রঙের প্রাডো; অন্যটি মাইক্রোবাস।
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়।
এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এরপর ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের পুলিশ শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমানকে গ্রেপ্তার করে। তারা ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ‘হোতা’ শাহীন নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
পরে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বাবুকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
অন্যদিকে কলকাতার পুলিশ জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে। আর শাহীনের সহকারী সিয়াম হোসেন কাঠমান্ডুতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে নেপালের পুলিশ।
সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদে কলকাতার সিআইডি এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বড় ধরনের তথ্য পেয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে সিয়ামের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার সকালে তাকে নিয়ে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার থানা এলাকার কৃষ্ণমাটিতে বাগজোলা খালে নামে কলকাতার সিআইডি। পরে একটি ঝোপের পাশ থেকে বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।
কলকাতার সিআইডি পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয়সংবাদমাধ্যম লিখেছে, আনারকে খুনের পর নিউ টাউনের বাসা থেকে তার শরীরের টুকরো টুকরো করা মাংস ট্রলি সুটকেসে ভরে বাগজোলা খালে ফেলে দিয়েছিল সিয়াম। সঙ্গে ছিল এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদার। খালে মাংস ফেলে আবার নিউ টাউনের বাসায় ফিরে যান সিয়াম।
এর আগে কলকাতার ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকেও মাংসের টুকরা উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেগুলো ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
আনার হত্যা: নেপালে আটক সিয়াম কলকাতা পুলিশের হাতে
আনার হত্যা: জবানবন্দিতে তানভীরের 'স্বীকারোক্তি'
সিয়ামকে ভারতের কাছে দিলেও সমস্যা হবে না:ডিবির হারুন
এমপি আনার হত্যা:সিয়ামের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
আনার হত্যা: সিয়ামকে নিয়ে কলকাতার খালে তল্লাশি, মিলেছে ‘হাড়গোড়’