কলকাতা সিআইডির কাছে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আরো দুজন গ্রেপ্তার আছেন।
Published : 07 Jun 2024, 03:45 PM
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন সিয়াম হোসেনকে কলকাতা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে নেপাল কর্তৃপক্ষ।
ঢাকার পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান শুক্রবার ঢাকায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, "নেপাল পুলিশ সিয়ামকে কলাকাতার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পর সেখানকার সিআইডি সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। এছাড়া কলকাতা সিআইডির কাছে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আরো দুজন গ্রেপ্তার আছেন।"
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ আখতারুজ্জামান শাহীন নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। বাড়ি ঝিনাইদহে হলেও তিনি যুক্তরষ্ট্রের নাগরিক।
শাহীনের সহযোগী সিয়ামও হত্যাকাণ্ডের পর কাঠমান্ডু গিয়ে আত্মগোপন করেন। সেই খবর পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার মাধ্যমে নেপালের পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়। ঢাকার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সিয়ামকে আটক করে কাঠমান্ডুর পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্য, শাহীনের সহকারী হিসাবে কাজ করতেন সিয়াম। তার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। পুলিশের আবেদনে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক গত ২ জুন সিয়ামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেন।
আনার হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডটি ভারতও তদন্ত করছে, আমাদের পুলিশও তদন্ত করছে। তদন্তের বিষয়ে দুই দেশ একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যেখানে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে সেখানে তদন্ত হবে। আবার বাংলাদেশের আইনে আছে, বিদেশে যদি কোনো বাংলাদেশি অপরাধ করে থাকে সেই অপরাধীকে বাংলাদেশে এনেও বিচার করা যাবে।"
সিয়াম নেপালে আটক হওয়ার পর গত ১ জুন নেপাল যান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ। এরপর ৪ জুন বিকালে নেপাল থেকে ফিরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "সিয়াম ভারতের পুলিশের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। ভারতের সঙ্গে নেপালের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। নেপাল যদি ভারত কিংবা বাংলাদেশের যে কোন একটি পক্ষের কাছে সিয়ামকে হস্তান্তর করে তাহলে তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না।
“যদি একই অপরাধের ক্ষেত্রে দুটি দেশ একজনকে দাবি করে তবে হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে নেপাল বিবেচনায় আনবে অপরাধের ধরনটা কী। হত্যা মামলা কোথায় হয়েছে। নেপাল বিভিন্ন বিবেচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেবে সিয়ামকে কোন দেশের কাছে হস্তান্তর করবে।”
হারুন সেদিন বলেন, "ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম। এই মামলায় আমাদের ও ভারতের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা কাজ করছেন এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আমরা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করছি। সিয়ামকে ভারতের পুলিশের কাছে দিলে আমাদের তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না। মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের ঘনিষ্ঠ ও কাছের মানুষ সিয়াম। সিয়ামকে যদি ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাহলে আলামত উদ্ধারের ক্ষেত্রে সে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবো।"
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়।
এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে দেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওই তিনজন হলেন- আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান। দুই দফা রিমান্ডের পর তারা তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
আনার হত্যাকাণ্ডের খবরের দিনই তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন শেরেবাংলা নগর থানায় তার বাবাকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে কলকাতায় দায়ের করা হয় হত্যা মামলা।
পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ঝিনাইদহের আখতারুজ্জামান শাহীন। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য আখতারুজ্জামানের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।
আনারের লাশ না মিললেও কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসের টুকরা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেগুলো ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে আনারের পরিবার কলকাতায় যাওয়ার পর সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরোগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
পুরনো খবর
আনার হত্যা: জবানবন্দিতে তানভীরের 'স্বীকারোক্তি'
এমপি আনার হত্যা: সিয়ামের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
সিয়ামকে ভারতের কাছে দিলেও সমস্যা হবে না: ডিবির হারুন
এমপি আনার হত্যা: সিয়ামের বিরুদ্ধে পরোয়ানা