এই হাড় আনারের শরীরের অংশ কি না সেটি শনাক্তে এখন ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
Published : 09 Jun 2024, 02:57 PM
ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন সিয়াম হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাগজোলা খালে পুলিশের তল্লাশিতে ‘হাড়গোড়’ উদ্ধার হওয়ার খবর এসেছে।
আনন্দবাজার লিখেছে, ওই হাড় আনারের কি না, তা শনাক্ত করতে এখন ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সিয়ামকে নিয়ে খালে তল্লাশি চালানোর ছবিসহ খবর প্রকাশ করেছে পশ্চিমঙ্গের বাংলা সংবাদমাধ্যমগুলো। রোববার কয়েকটি পত্রিকা উদ্ধার হওয়া হাড়ের ছবিও প্রকাশ করেছে।
তবে আনার হত্যার তদন্তের দায়িত্বে থাকা কলকাতা সিআইডির তফর থেকে হাড় উদ্ধারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি।
সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে সিয়ামের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার সকালে তাকে নিয়ে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার থানা এলাকার কৃষ্ণমাটিতে বাগজোলা খালে নামে সিআইডি পুলিশ।
এ সময় নৌ সেনা এবং কলকাতা পুলিশের ডিএমজি টিমও সিআইডির সঙ্গে ছিল। প্রথমে তারা খালে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালায়। পরে সেখানে একটি ঝোপের পাশ থেকে বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়।
এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের পুলিশ আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
অন্যদিকে কলকাতার পুলিশ জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে। আর সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয় কাঠমান্ডুতে। পরে তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে নেপালের পুলিশ।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তার বাল্যবন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ঝিনাইদহের আখতারুজ্জামান শাহীন। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল।
আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে। শাহীনের সহকারী সিয়ামও এ ঘটনায় ‘জড়িত’ এবং হত্যাকাণ্ডের পর তিনি নেপালে গিয়ে আত্মগোপন করেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
কলকাতার সিআইডি পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম লিখেছে আনারকে খুনের পর নিউ টাউনের বাসা থেকে তার শরীরের টুকরো টুকরো করা মাংস ট্রলি সুটকেসে ভরে বাগজোলা খালে ফেলে দিয়েছিল সিয়াম। সঙ্গে ছিল এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদার। খালে মাংস ফেলে আবার নিউ টাউনের বাসায় ফিরে যান সিয়াম।
এর আগে কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকেও মাংসের টুকরা উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেগুলো ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আনারের পরিবার কলকাতায় যাওয়ার পর সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরোগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
বিচার নিয়ে পুলিশ যা বলছে
আনার হত্যাকাণ্ডের খবরের দিনই তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন শেরেবাংলা নগর থানায় তার বাবাকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে কলকাতায় দায়ের করা হয় হত্যা মামলা।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডটি ভারতও তদন্ত করছে, আমাদের পুলিশও তদন্ত করছে। তদন্তের বিষয়ে দুই দেশ একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যেখানে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে সেখানে তদন্ত হবে। আবার বাংলাদেশের আইনে আছে, বিদেশে যদি কোনো বাংলাদেশি অপরাধ করে থাকে সেই অপরাধীকে বাংলাদেশে এনেও বিচার করা যাবে।"
এ মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে গত ১ জুন নেপাল যান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ। ৪ জুন বিকালে দেশে ফিরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম। এই মামলায় আমাদের ও ভারতের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা কাজ করছেন এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আমরা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করছি।
“সিয়ামকে ভারতের পুলিশের কাছে দিলে আমাদের তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না। মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের ঘনিষ্ঠ ও কাছের মানুষ সিয়াম। সিয়ামকে যদি ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাহলে আলামত উদ্ধারের ক্ষেত্রে সে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারব।"