মিন্টু ‘অর্থদাতা না কি পরিকল্পনাকারী’ তা রিমান্ডে থাকাকালে জিজ্ঞাসাবাদে জানার চেষ্টা করা হবে, বলেন হারুন।
Published : 13 Jun 2024, 10:14 PM
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে দুই কোটি টাকা লেনদেনের যে তথ্য সামনে এসেছে সেই সূত্রে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু ‘অর্থদাতা’ কি না তা জানতে চাইবেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
এ মামলায় গোয়েন্দাদের হাতে ‘ডিজিটাল অ্যাভিডেন্সও’ এসেছে, যেগুলোর ভিত্তিতে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশানার হারুন অর রশীদ।
বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার দেখানো এবং রিমান্ড চাওয়ার কারণও তুলে ধরেন তিনি।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মিন্টুকে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে মঙ্গলবার আটকের খবর এলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনীর পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত করা হয়নি। পরদিন সংসদ সদস্য আনারকে অপহরণ করে হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা ডিবি মিন্টুকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দেয়।
পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে আট দিনের রিমান্ডেও পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
এদিন সন্ধ্যায় মিন্টুকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ডেকে’ এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর আনার হত্যা সংক্রান্ত প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
তদন্তে সুস্পষ্ট অভিযোগ না পেলে কাউকে ডাকা হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, মিন্টু ‘অর্থদাতা না কি পরিকল্পনাকারী’ তা রিমান্ডে থাকাকালে জিজ্ঞাসাবাদে জানার চেষ্টা করা হবে।
এর আগে বিকালে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, তাদের কাছে বেশ কিছু ‘ডিজিটাল অ্যাভিডেন্স’ রয়েছে, যেগুলোর ভিত্তিতে তারা তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
এছাড়া সংসদ সদস্য আনার হত্যার ব্যাপারে দুই কোটি টাকা লেনদেনের একটি তথ্য পাওয়া গেছে, সেই তথ্য কতটুকু মিন্টু জানেন সেটাও জানার চেষ্টা করা হবে।
“পাশপাশি আমাদের কাছে থাকা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা গেছে ১৬ মে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মিন্টু জেনেছে। এরপরও কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাল না সেটাও জানতে চাওয়া হবে মিন্টুর কাছে। অথচ আমরা জেনেছি ২২ মে। এতদিন কেন সে গোপন করল?”
হারুন বলেন, কলকাতায় বাসা ভাড়া নিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আকতারুজ্জামান শাহীনের পক্ষে যেমন শিমুল ভূঁইয়া কাজ করেছে, তেমন মিন্টুর পক্ষে কাজ করেছে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের আরেক নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু।
শাহীন ছাড়া ঝিনাইদহের শিমুল ভূঁইয়া, বাবু ও সবশেষ মিন্টুকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে বলে তাদের ধারনা।
এর আগে এ ঘটনায় তানভীর ভুঁইয়া (৩০) ও সেলেস্টি রহমানকে (২২) গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এছাড়া জাহিদ নামে এক কসাইকে ভারতে এবং সিয়াম নামে আরেকজনকে নেপালে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এই ঘটনায় তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করেন। এরপরই দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়।
এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আনার হত্যাকাণ্ডের খবরের দিনই তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন শেরেবাংলা নগর থানায় তার বাবাকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে কলকাতায় দায়ের করা হয় হত্যা মামলা।
কলকাতা পুলিশ হত্যা মামলা এবং ঢাকার পুলিশ খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ মামলার তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন:
আনার হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু ৮ দিনের রিমান্ডে
প্রকৃত অপরাধীরা যাতে সুযোগ না পায়,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আনারকন্যা
আনার হত্যা:উদ্ধার মাংসের টুকরো ও হাড়গোড়'পুরুষ মানুষের'
আনার হত্যা:বাবুসহ চারজনের মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ