সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনায় আরেক আওয়ামী লীগ নেতার জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টুর নাম আসে।
Published : 12 Jun 2024, 10:21 PM
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘ডেকে এনে’ জিজ্ঞাসাবাদ করার তথ্য দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। বলেছেন, সদুত্তর দিতে না পারলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
বুধবার রাজধানীর মিন্টু রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আনার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া শিমুল ভুঁইয়া এবং ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের আরেক নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্টুকে ডেকে আনা হয়েছে। এ বিষয়ক প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলকাতায় খুন হওয়া সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলার তদন্ত করছে ডিবি। হত্যা মামলার তদন্তে রয়েছে কলকাতার পুলিশ।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নাম আসায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয় বলে খবরে আসে। তাকে ধানমন্ডি এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করার তথ্য এলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ বা গোয়েন্দাদেরে কেউ নিশ্চিত করেননি।
বুধবার মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনার বিষয়টি সাংবাদিকদের বলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন বলেন, “বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ধারাবাহিকতায় আমরা এর আগে ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা বাবুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসি। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি আমাদের কাছে অকপটে স্বীকার করেছেন যে আনার হত্যার মূল ঘাতক শিমুল ভুঁইয়ার তার সঙ্গে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গাড়িতে বসে মিটিং করেছে। সেখানে শিমুল তাকে আনারকে হত্যার পরের ছবি দেখিয়েছেন।
“পরে যখন আমরা বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলাম আপনি কাকে কাকে মৃত ব্যক্তির ছবি দেখিয়েছেন তখন তিনি আরেকজন আওয়ামী লীগ নেতার কথা বলেছেন। তার মোবাইলগুলো কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেছেন ’আরেক নেতার কাছে আছে তার মোবাইল’।”
হারুন বলেন, “যখন আমরা সবাই এমপি আনারকে খুঁজছি সেখানে মে মাসের ১৬-১৭ তারিখে ভাঙ্গাতে গাড়িতে বসে মিটিং করল। গাড়ির ভেতরে বসে টাকা-পয়সার কথা বলেছে তারা। বাবু এবং কিলার গাড়িতে বসে মিটিং করে একজন নেতাকে ফোন করেন।
“এখন বাবু বলছেন, আমি ওমুকের সাথে কথা বলেছি, আমার মোবাইলগুলো তাকে দিয়েছি। এই তথ্যগুলোর সঠিকতা যাচাইয়ের জন্যই মূলত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে ডেকেছেন।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঊর্ধ্বতন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “মিন্টু যদি তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন তাহলে তিনি এখান থেকে চলে যাবেন। আর যদি না পারেন তাহলে তদন্তের ধারাবাহিকতায় যা করার তা করা হবে।”
মিন্টুর কাছে কী জানতে চাওয়া হবে সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করে লাশটাকে টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দিলেন সে মানুষগুলো তার মূল যে কিলার শিমুল ভুঁইয়া বাংলাদেশে এলেন ১৫ তারিখ। এরপর তিনি ভাঙ্গায় গেলেন ওনাদেরকে ছবি দেখালেন, তারাও দেখলেন। তারা সবাই কিন্তু একই জেলার মানুষ। একটা জনপ্রিয় এমপিকে তারা মারল আর তারা সেটা ছবি দেখেও হজম করলেন। কেন সেটা করলেন সেটাই তো জানতে চাইবে আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা।”
এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন-শিমুলের জবানবন্দিতে মিন্টুরও নাম এসেছে, বাবুরও এসেছে। বাবুকে আপনারা গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিলেন আর মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনলেন। কেন এই তফাৎ?
জবাবে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন বলেন, “দেখেন আমরা কাউকে হয়রানি করি না, অপরাধী হলে কাউকে ছাড়ও দিই না। তদন্তকারী কর্মকর্তা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই কাজ করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সে সদুত্তর দিতে না পারলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ হত্যাকাণ্ডে আর কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাবু আমাদের হেফাজতে আছেন। মিন্টুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন আইও। এ ঘটনার আরও তথ্য-উপাত্ত আছে আমাদের কাছে। আমরা সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করছি।
“আমরা ধীরে সুস্থে এগোচ্ছি। আমি বলতে পারি আনারকে যারা হত্যা করেছে আমরা যাদের সংশ্লিষ্টতাই পাব, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের কেউ যেন কোনো সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহযোগিতা চেয়েছেন আনারের মেয়ে ডরিন। এ ব্যাপারে মন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ডরিন সাংবাদিকদের বলেন, যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার তদবির চলছে জানতে পেরে তার উদ্বেগের বিষয়টি মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছেন। বাবা হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে মন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন।
ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এ অর্থের যোগানদাতা কে, কেন তারা করেছে, কেনই বা একজন তার তিনটি মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে বলে জিডি করলেন এটার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের ব্যাপারে ডিবির কাছে কোন না কোনো তথ্য আছে বলে মনে করেন আনারের ছোট মেয়ে ডরিন।
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়।
এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আনার হত্যাকাণ্ডের খবরের দিনই তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন শেরেবাংলা নগর থানায় তার বাবাকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে কলকাতায় দায়ের করা হয় হত্যা মামলা।
প্রকৃত অপরাধীরা যাতে সুযোগ না পায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আনারকন্যা
আনার হত্যা: উদ্ধার মাংসের টুকরো ও হাড়গোড় 'পুরুষ মানুষের'
আনার হত্যা: বাবুসহ চারজনের মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ